আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের বিজেপিশাসিত কর্ণাটকের একটি কলেজে হিজাব পরিহিতা মুসলিম ছাত্রী মুসকানকে দেখে হিন্দুত্ববাদী যুবকরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে উত্যক্ত করার সময় তিনি পাল্টা জবাব দেন ‘আল্লাহু আকবর’ শ্লোগান এর মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনি দৃশ্যপট নিয়ে ধারণকৃত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
ওই ভিডিওটিতে দেখা গেছে, হিজাব পরে মুসকান যখন তার স্কুটি পার্কিং করে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন বেশ কিছু মানুষ তাকে অনুসরণ করছেন। গেরুয়া রঙের স্কার্ফ পরিহিত একদল ব্যক্তি ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগানে মুসকানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর চিৎকার করছে। মুসকানও তখন ভিড়ের দিকে ফিরে হাত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
বিবিসি বাংলায় এক সাক্ষাৎকারে কর্নাটকের মান্ডা জেলার প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের বি.কম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুসকান খান বলেন, আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না। সব সময় যেভাবে কলেজে যাই, সেভাবেই গেলাম। বাইরে থেকে আসা একদল লোক সেখানে বলল যে বোরকা পরে কলেজের ভেতরে যাবে না। কলেজে যেতে হলে বোরকা ও হিজাব খুলে ভেতরে যেতে হবে। তুমি যদি বোরকা পরে থাকতে চাও, তবে বাড়ি ফিরে যাও। আমি ভিতরে এলাম। ভেবেছিলাম চুপচাপ চলে যাব। কিন্তু সেখানে অনেক শ্লোগান উঠছিল। ‘বোরকা কাদ’, ‘জয় শ্রী রাম’-এর মতো শ্লোগান। আমি ভেবেছিলাম আমি ক্লাসে যাব, কিন্তু ছেলেগুলো আমাকে এমনভাবে অনুসরণ করছিল যেন তারা সবাই আমাকে আক্রমণের চেষ্টা করছে। তারা ছিল ৪০ জনের মতো। আমি ছিলাম একা। কারও মধ্যে আমি মনুষ্যত্ব লক্ষ্য করিনি। হঠাৎ তারা আমার কাছে এসে চিৎকার করতে লাগল। কারও কারও হাতে ছিল কমলা রঙের স্কার্ফ। আর আমার মুখের সামনে এসে স্কার্ফ দোলাতে দোলাতে বলতে লাগল – জয় শ্রী রাম, চলে যাও, বোরকা খুলে ফেলো। তারা আমাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেও দিচ্ছিল না। তারা অনেক বহিরাগত ছিল এবং কলেজের ছাত্র ছিল কম। বেশির ভাগই ছিল বহিরাগত।
মুসকান আরো বলেন, আমার সামনে চার মেয়ে এসেছিল। গেট তালাবদ্ধ ছিল। তারপর কোনোমতে প্রিন্সিপাল এলেন। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা আমাকে রক্ষা করেন। ছেলেরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভেতরে গিয়েছিল। কিন্তু বেরিয়ে এসে একই কাজ করল। আমি কাঁদিনি। আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। আমি ভয় পেয়েছিলাম, তাই আল্লাহু আকবার বলেছিলাম। ভয় পেলে আমি আল্লাহর নাম নিই। আল্লাহর নাম নিলেই আমার সাহস বেড়ে যায়।
এর আগে গত জানুয়ারিতে কর্ণাটকের উদুপির একটি সরকারি কলেজে মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরে আসায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষ থেকে ওই ছাত্রীদের হিজাব পরতে নিষেধ করলেও তারা হিজাব পরে ক্লাসে আসেন। এ সময়ে তাদেরকে ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এরপর থেকে রাজ্যে হিজাব নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় এবং অনেক জায়গায় তা পড়াশোনায় প্রভাব ফেলেছে। সুত্রঃ বিবিসি বাংলা।