জাতীয় ডেস্কঃ আজ বুধবার (২৬ জানুয়ারী) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরু হলে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন অভিযোগ করে বলেছেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং দেশের অগ্রগতি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে বিএনপি-জামায়াত।
সংসদে তিনি আরও বলেন, বিএনপির এমপি হারুন রশিদ এবং রুমিন ফারহানা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করা নিয়ে সংসদে মিথ্যাচার করেছে। মূলত দেশের অগ্রগতি বন্ধ করে দেয়ার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করেছে বিএনপি-জামায়াত। সে কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রেকে দিয়ে চাপ দিচ্ছে। যা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
গত ২৩ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকা বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের তথ্য চান। সে সময় বিস্তারিত তথ্যের জন্য তিনি সময় চেয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লবিস্ট নিয়োগ দেশটির আইন অনুযায়ী বৈধ প্রক্রিয়া। ভারত, পাকিস্তান, কাতার, ইরান, ইরাক, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠানই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে থাকেন। জামায়াত-বিএনপি সর্বমোট আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে।
তিনি বলেন, এগুলো আমার তথ্য নয়, যেগুলো নিবন্ধন করেছে সে তথ্যগুলোই দেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে জামায়াত একটি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এজন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট অফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চারটি ফার্মকে ২৭ লাখ ডলার প্রতি বছর প্রতি মাসে রিটেইনার ফি এক লাখ ২০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরেও আরেকটি ফার্ম নিয়োগ দেয় বিএনপি। এই তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। এই তথ্যগুলো আমি বানাইনি, এগুলো আমেরিকান ওয়েবসাইটে আছে। আপনারাও দেখতে পারেন। সেখান থেকেই আমরা সংগ্রহ করেছি। আমেরিকায় যে লবিস্ট নিয়োগ করা হয় তারা তাদের আইন অনুযায়ী কী কারণে নিয়েছে, কত টাকা নিয়েছে সেটা রেজিস্ট্রার করে। সেখান থেকে আমরা তথ্য পেয়েছি। আর খুবই তাজ্জবের বিষয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিএনপির কিছু নেতারা আমেরিকায় গিয়েছেন। তাদের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করার জন্য, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার জন্য। এটা খুবই দুঃখের বিষয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বলতে চাই যে, তারা যে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তাদের লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন তা দেশের মানুষ জানলে দুঃখিতই শুধু হবে না, তাদের ধিক্কার দেবে। কারণ, লবিস্টরা চিঠি দিয়েছে, আমেরিকানদের বলেছে, তোমরা যে বাংলাদেশে সাহায্য-সহযোগিতা করো এগুলো তোমরা বন্ধ করে দাও। আর এগুলো বন্ধ করলে কী হবে? এই যে আপনারা যারা বিরোধী দলে আছেন, যে যেখানে আছেন, নাগরিকরা দু’বেলা খেতে পারে, ইলেকট্রিসিটি পায়, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে এই উন্নয়ন যেন ব্যহত হয় এজন্য তারা ইউএস সরকারে বলছেন এগুলো। আমি বিশ্বাস করতে পারি না, নিশ্চই বিএনপির মাঠে ময়দানে যে কর্মীরা আছেন, তারা কেউই চাইবেন না দেশের অমঙ্গল হোক। তারা কেউই চাইবেন না ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হোক। কিন্তু তাদের কিছু নেতৃস্থানীয় লোক তাদের অগোচরে এমন কাজ করেছেন যে, আমার বিশ্বাস, এখানে যারা সংসদ সদস্য আছেন তারা এক বাক্যে স্বীকার করেন এ ধরনের লবিস্ট তারা বাংলাদেশের জন্য চাইবেন না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিএনপির কিছূ কিছু লোক জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের সংসদকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করার জন্য।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন আরো অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে আশ্রয় দিয়ে আমেরিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে- এমন অপপ্রচারের অংশ হিসেবে ১৮টি দেশে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। এসব দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকে ধিক্কার জানাই। এটা লজ্জাজনক।
এসব অপপ্রচার বন্ধে ও অসত্য তথ্যের বিপরীতে সত্য তুলে ধরতে বাংলাদেশ সরকার সেখানে ‘পিআর প্রতিষ্ঠান’ নিয়োগ দিয়েছে বলেও সংসদে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।