মোঃ মিনহাজ উদ্দীন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ফারুক কন্ট্রাক্টর নামক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোটি টাকা প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার আপন ভাই প্রবাসী মোঃ সমশুল আলম। ২৫ জানুয়ারী বিকেল ৩ টায় লোহাগাড়া প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রবাসী সামশুল আলম লোহাগাড়া ০৬নং ওয়ার্ডস্থ সদর ইউনিয়নের আব্দুল আলমের পুত্র । লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমার দীর্ঘ ২৬ বছর প্রবাসে জীবনের অতি কষ্টে অর্জিত অর্থ থেকে নিজ এলাকায় জমি,দোকান ও ফ্লাট ক্রয়,গাছ বাগান ক্রয়,কবরস্থান নির্মাণ ও নগদ টাকা ধার নেওয়া সহ বিভিন্ন অজুহাতে আমার আপন বড় ভাই মোহাম্মদ ফারুক প্রকাশ ফারুক কন্ট্রাক্টর আমার কাছ থেকে ধাপে ধাপে ১ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা নিয়েছিল। এর মধ্যে আমাদের এলাকার আমির হামজার কাছ থেকে ৪ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা, আজিজ নগর গাছ বাগান ক্রয়ের কথা বলে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, কক্সবাজার টেকনিক্যাল কলেজের পিছনে জায়গা ক্রয়ের কথা বলে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার, ২০১৮ সালের ১৬ই জানুয়ারি আমার কাছ থেকে নগদ ধার ৪ লক্ষ টাকা, কালোয়ার পাড়া নতুন কবরস্থান নির্মাণ করবে বলে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, ছাবেরা খাতুনের কাছ থেকে জমি ক্রয় বাবদ ১৮ লক্ষ টাকা নিয়েছিল। আর.এফ বিল্ডার্সের মালিক আহমদ সফির কাছ থেকে ফ্ল্যাট ও দোকান ক্রয়ের কথা বলে ফারুক আমার কাছ থেকে ৪৯ লক্ষ টাকা নিয়েছিল।
এছাড়া ফারুক আমার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ১৯ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা ধার নিয়েছে এবং এলিভেইট প্রপার্টিজ লিঃ এর কাছ থেকে দোকান নেওয়ার কথা বলে ফারুক আমার কাছ আরও থেকে ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছে। উপরোক্ত মোট টাকার মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা আর. এফ বিল্ডার্স এর মালিক আহমদ সফি কে দেওয়ার জন্য ফারুক কে হাতে নগদ দিয়েছিলাম এবং ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা ফারুকের ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লোহাগাড়া শাখার হিসাব নং- ০৪৬১১০৭৬০ এই নাম্বারে লেনদেন করেছি। যাহার ব্যাংক ষ্টেইটমেন্ট আমার কাছে আছে।
প্রতারক ফারুকের সবচেয়ে বড় প্রতারণা হচ্ছে আর.এফ বিল্ডার্সের মালিক আহমদ সফির কাছ থেকে ফ্ল্যাট ও দোকান ক্রয় বাবদ ৪৯ লক্ষ টাকা নিয়ে আমাকে শুধুমাত্র ৯ লক্ষ টাকার ডকুমেন্টস দিয়েছে। এক্ষেত্রে ফারুক নগদ ৪০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। অন্যদিকে ফারুক ছাবেরা খাতুনের কাছ থেকে আমার নামে ২৫ গন্ডা ক্রয়ের কথা বলে ফারুক ৫ গন্ডা জায়গা তার নিজ নামে দলিল করে হাতিয়ে নিয়েছে। আমার সাথে ফারুকের প্রতারণা ও আত্মসাৎ’র বিষয়ে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় কোন টাকা না পাওয়ায় আমি অসহায় হয়ে লোহাগাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম।
আমার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লোহাগাড়া সদর ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুচ্ছাফা চৌধুরী ৪জন পরিষদ সদস্য এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিকে নিয়ে গ্রাম্য আদালত শালিশী বোর্ড গঠন করে একটি আদেশ জারি করে। আদেশপত্রে উল্লেখ থাকে যে, ফারুক ও স্বাক্ষীগণের স্বীকারোক্তি মতে আমার কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছে তার মধ্যে ৩৮ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার হিসাব দেখালেও ৫০ লক্ষ টাকার কোন কাগজপত্রের হিসাব দেখাতে পারেনি। এ টাকার বিষয়ে ফারুক বলে যে, তিনি উক্ত ৫০ লক্ষ টাকা লোহাগাড়া নিবাসী নূর আহমদ সওদাগরের পুত্র আর.এফ বিল্ডার্সের মালিক আহমদ সফি কে দিয়েছেন। তাই ফারুকের স্বীকারোক্তি মতে আহমদ সফির ৫০ লক্ষ টাকার বিষয়ে আমার সাথে একটি চুক্তি সম্পাদন করে দেওয়ার জন্য ফারুককে আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ফারুক ঐ টাকার মধ্যে ৯ লক্ষ টাকার চুক্তি করে দিলেও এখনো বাকী ৪১ লক্ষ টাকার কোন হিসাব দিচ্ছে না। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জালিয়াতি ও হুমকীর অভিযোগে থানায় জি.ডি করেছিলাম। আমার টাকার হিসাব ও আমার টাকায় ফারুকের নামে ক্রয়কৃত জমি ফেরৎ চাওয়ায় আমাকে সে আমাকে প্রাণনাশের ভয়-ভীতি দেখায়।
ইতিমধ্যে ফারুক ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে আমি ও আমার পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছে। এমনকি ফারুকের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা গত ১৯ জানুয়ারি বুধবার রাতে আমাকে স্ব-পরিবারে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। অন্যথায় আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে লাশ গুম করারও হুমকী দিয়েছে। এ ঘটনায় আমি ৯৯৯ এ ফোন করলে লোহাগাড়া থানা পুলিশ আমার বাড়িতে পৌঁছার আগ মুহুর্তে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আমি আপনাদের মাধ্যমে আমার প্রবাস জীবনের অর্জিত অর্থ ফিরে পেতে চাই প্রতারক ফারুক কন্ট্রাক্টর থেকে এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মহলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং আমি এ ঘটনার ন্যায় বিচার চাই।।”