মো. কামরুজ্জামান, নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তর পূর্বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে নেত্রকোনা জেলার অবস্থান। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এই জেলা অনেকটাই অবহেলিত। এই দুটি উপজেলা কলমাকান্দা ও দূর্গাপুরে অনেক আদিবাসি ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠি বসবাস করে, যাদের মধ্যে গারো, হাজং ও খাসিয়া অন্যতম।
দূর্গম এই দুই উপজেলায় সরকারের টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন আজ পর্যন্ত এই এলাকার মানুষের দৃশ্যমান নয়। স্বচ্ছ পানি সরবরাহ এবং সেনিটেশন ব্যবস্থা সরকারের তরফ থেকে আজ পর্যন্ত গড়ে উঠে নি। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করলেও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় নাই।
এই এলাকায় ভূ-অভ্যন্তরে কঠিন শিলা স্থর থাকায় ভূগর্ভস্থ পানি ১০০ থেকে ১৫০ফুট গভীরে বোরিং কার্য সম্পন্ন করা যায় না। ফলে ১০০ থেকে ১৫০ ফুটের মধ্যে ভালো পানির স্থর প্রাপ্তি সম্ভব হচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পানির স্থর পাওয়া গেলেও আয়রনের আধিক্যের কারণে পানি পান যোগ্য হচ্ছে না। ফলে উন্নত স্যানিটেশন তো দূরের কথা বেসিক স্যানিটেশন ব্যবস্থাও অনুপস্থিত। সীমান্তের পার্শ্ববর্তী নদী গোলো যেমন সোমেশ্বরী, গয়েশ্বর ইত্যাদি বর্ষাকালে পাহাড়ী ঢলের ফলে নদীগোলোর পানি উপচে যায় এবং ফসলি জমি নষ্ট করে, যা শীতকালে পানি শূন্য হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়। পাহাড় আর সমতল সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা সুপেয় পানির অভাবে পানির হাহাকার হয়ে যায়।
কিছু কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। যা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে খুবই কষ্টকর। এইসব এলাকার সীমান্তবর্তী পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি জনপদের মাথাপিছু আয় দেশের অন্যন্য এলাকার মানুষের তুলনায় খুবই কম। অপরদিকে পানি সরবরাহের এবং বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ব্যবসা বানিজ্যসহ সকল ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে উক্ত পাহাড়ী জনপদ বঞ্চিত, ফলে নূতন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হচ্ছে না। সুপেয় খাবার পানি এবং তার ব্যবহার্য্য পানির তীব্র সংকট দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই দুটি উপজেলায় ৩/৪ টি ইউনিয়ন পর্যটনের জন্য আকর্ষনীয় স্থান হলেও সুপেয় খাবার পানির অভাবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থার কারণে, পর্যটকদের জন্যে যে কোন ধরনের সুযোগসুবিধা গড়ে উঠেনি।
পাহাড়ী জনপদ প্রাণের উচ্ছাস এবং টেকসই পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের উদ্দোগ গ্রহণ প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের সকল উদ্দোগসমূহ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন নেত্রকোনা এর সমন্বয়ে জনস্বস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ করে যাওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ ও স¦ল্পমূল্যে খাবার পানিতে সকলের সার্বজনীন ও সমতা ভিত্তিক প্রবেশাধিকারের লক্ষ্য অর্জন, নারী ও মেয়ে সহ অরক্ষিত পরিস্থিতিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠির চাহিদার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পর্যাপ্ত ও সমতাভিত্তিক পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি সম্মত জীবনরীতিতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং খোলা জায়গার অবসান ঘটানো, দূষণ হ্রাস করে পানিতে আবর্জনা নিক্ষেপ বন্ধ করা এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও উপকরনের নির্গমন ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে এসে, অপরিশোধিত বর্জপানির অনুপাত অর্ধেকে নামিয়ে এনে এবং বৈশ্বিকভাবে পুনশ্চক্রায়ন (রিসাইকলিং) ও নিরাপদ পুনর্ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমানে বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে পানির গুনগত মান বৃদ্ধি করা।
২০৩০ সালের মধ্যে সকল খাতে পানি ব্যবহার দক্ষতার অভাব উন্নয়ন এবং পানি-সংকট সমাধানকল্পে সুপেয় পানির সরবরাহ এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং পানি সংকটের ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমানে কমিয়ে আনা। এধরনের সরকারী কর্মসূচির কথা থাকলেও বাস্তবে তা মিলছে না।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাকে জানান জরুরী ভিত্তিতে উপর্যুক্ত পানিরস্তর অনুসন্ধানের জন্য বেশ কয়েকটি পরিক্ষামূলক গভীর নলকূপ এবং ৪/৫ টি উৎপাদন নলকূপ সহ পাম্পহাউজ ও ওয়াটার কম্পাউন্ড নির্মাণ করে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকে সঞ্চালন পাইপ লাইনের মাধ্যমে পাইপ নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে পানি সরবরাহের সৃষ্টি করে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে চাহিদা পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন গুলির সম্ভাবনাময় পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান গুলোতে ওয়াটার এটিএম বুথ ও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা যেতে পারে। সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় কমিউনিটি পর্যায়ে পানি ব্যবহার এবং পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষনের সক্ষমতা বৃদ্ধি আশু প্রয়োজন।