কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় সরকারি ভূর্তকীর পাওয়ার থ্রেসার মেশিন (মাড়াই মেশিন) সরবরাহে দাম বেশী ধরা সহ দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও নিবন্ধিত ওয়ার্কশপ মালিকদের বিরুদ্ধে।
মেশিনের দাম বেশী ধরার প্রতিবাদ করায় বরাদ্দকৃত ভূর্তকীর সুবিধা বাদ দেওয়া হয়েছে। ৯ জানুয়ারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভূর্তকী বঞ্চিত উদ্যোক্তা আশরাফুল ইসলাম। তিনি জেলার বদলগাছী উপজেলার বৈকুন্ঠপুর গ্রামের মৃত ছামসুর রহমানের ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কৃষিতে চাষাবাদে কৃষকদের সুবিধার জন্য সরকার ভূর্তকীর ব্যবস্থা করেছে। কৃষিকে আধুনিকায়ন করতে চলতি অর্থ বছরে জেলার বদলগাছী উপজেলায় ১০টি পাওয়ার থ্রেসার মেশিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার একটি ওই উদ্যোক্তার নামে। বরাদ্দ আসার পর অফিসে যোগযোগ করলে উপজেলা কৃষি অফিসার জানান কৃষি মন্ত্রনালয় হতে নিবন্ধনকৃত ওয়ার্কশপ হতে ক্রয় করতে হবে।
জেলায় ৮০টির মত পাওয়ার থ্রেসার মেশিন তৈরীর ওয়ার্কশপ থাকলেও মাত্র দুইটি ওয়ার্কশপ এর নিবন্ধনভুক্ত। যা পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর বাজারের এম.আর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ও ভাই-ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। দুজনই সম্পর্কে আপন চাচা-ভাতিজা ও পত্নীতলা উপজেলা কৃষি অফিসের এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার আত্নীয়। কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী উদ্যোক্তা আশরাফুল ওই দুই ওয়ার্কশপে যোগাযোগ করেন। সময় উপযোগি পাওয়ার থ্রেসার মেশিনের দাম ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দাম বলে জানানো হয়। যেখানে সরকারের ভূর্তকীর ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা দাবী করা হয়। অথচ একই মানের একটি পাওয়ার থ্রেসার মেশিন অন্য ওয়ার্কশপগুলো ২ লক্ষ ৪০হাজার হতে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিবন্ধিত ওয়ার্কশপ দুইটির নির্ধারিত দামের তুলনায় ৩০ হতে ৩৫ হাজার টাকা কম। বিষয়টি জানিয়ে কিছু দাম কমানো জন্য অনুরোধ করলে তারা পরিস্কার জানিয়ে দেয় এক টাকাও কমাতে পারবে না। কেননা ভূর্তকীর টাকা উত্তোলনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারসহ দপ্তরের বিভিন্ন জায়গায় ফাইল স্বাক্ষর করাতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে।
অভিযোগকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, কৃষি শ্রমকে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে সহজলভ্য করার লক্ষ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে জমি চাষকে সহজলভ্য করতে চাষের জন্য ট্রাক্টর কিনে কৃষকদের সেবা দেওয়া ও স্বল্পমূল্যে গভির নলকূপের মাধ্যমে পানি সেচের ব্যবস্থা করেছি। ভূর্তকীর পাওয়ার থ্রেসার মেশিনের জন্য কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা হলে আমার নামে একটি বরাদ্দ আসে। পরবর্তীতে মেশিনটি ক্রয়ের জন্য নিবন্ধিত ওয়ার্কশপে যোগাযোগ করা হলে বাজার তুলনায় অতিরিক্ত দাম চাওয়া হয়। দাম কিছুটা কমানোর জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার নিচে কোন কম হবে না। আর এ বছর প্রকল্পের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। চাইলেও আর ভূর্তকীর সুবিধে নিতে পারবেন না। আগামী বছর নিতে পারেন বলে জানানো হয়।
তিনি বলেন, বাজার মূল্যের চাইতে দাম বেশি ধরার প্রতিবাদ করায় আমাকে ভূর্তকীর সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি এর প্রতিকার চাই। জেলার সকল ভূর্তকী সুবিধাভোগির নিকট হতে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার সুব্যবস্থা গ্রহনসহ দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত কৃষি কর্মকর্তা ও ওয়ার্কশপ মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাই।
ভাই-ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মালিক হারুনুর রশিদ বলেন, নিবন্ধনের বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে আপনারা উপজেলা কৃষি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দাম বেশী ধরার কারণ মূলত আপনারা তো বোঝেন অনেক খরচাপাতি আছে। এখানেও ভেজাল ভাই। সব কথা তো বলা যায় না। আপনাকে বুঝে নিতে হবে।
এম.আর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মালিক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমি যেসব যন্ত্রাংশ দিয়ে মাড়াই মেশিন তৈরী করছি যা অন্য কেউ ওই দামে তৈরী করতে পারবে না। তবে আমার পক্ষে কম দামের মধ্যে তৈরী করা সম্ভব না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান আলী বলেন, ভূর্তকীর বেঁধে দেওয়া সময় মত মেশিন ক্রয় করতে পারেনি এটা তার ব্যার্থতা। আর দাম কম-বেশী ধরার বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। অধিদপ্তর ও নিবন্ধিত ওয়ার্কশপ মালিকরা এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তবে সময়ের মধ্যে অভিযোগকারী মাড়াই মেশিন নিতে পারেননি। মেশিন নিতে না পারায় তিনি বিভিন্ন অভিযোগ করছেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে।