সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ প্রেম মানে না দিন রাত, প্রেম পবিত্র।প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কের কারণে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী প্রাণ দিতে হলো! বয়স ও যুগের তালে প্রেমিকের ডাকে প্রেমিকা রাতের আধাঁরে ঘর থেকে বের হয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে পবিত্র ভালবাসাকে অপবিত্র ও কংলকিত করতে গিয়ে জীবিত অবস্থায় আর ঘরে ফিরে আসতে পারলনা জুবা!
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে হাত পা ও মূখ বেঁধে কিশোরী হত্যার ৭২ ঘন্টার মধ্যে ২ ঘাতককে গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই)। গত সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে নবীগঞ্জের বাগাউড়া গ্রামের সুফি মিয়া’র কিশোরী কন্যা জুবা আক্তার (১৭)কে হত্যা করে ধান ক্ষেতে ফেলে চলে যায় ঘাতকরা। এমন ন্যাক্কার জনক হত্যাকান্ডের খবর দেশ- বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার পাশাপাশি চুলছেড়া বিশ্লেষণ চলতে থাকে। এ খবর নবীগঞ্জ থানায় আসার সাথে সাথেই গত ২৯ ডিসেম্বর দুপুর ১১টার দিকে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ডালিম আহমেদ ও তদন্ত ওসি আমিনুল ইসলাম সহ একদল চৌকস পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল ছুটে আসেন, নবীগঞ্জ- বাহুবল সার্কেলের এএসপি আবুল খায়ের চৌধুরী।
এ ব্যাপারে জুবা’র বাবা সুফি মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন, গত রাতে আমরা এক সাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমার মেয়ে পাশের রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। আমিও ঘুমিয়ে যাই। পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে কাজের জন্য জমিতে চলে যাই। কাজের ফাঁকে খবর আসে আমার মেয়ের গলাকাটা লাশ ধানক্ষেতে পড়ে আছে। এ কথা শুনে দৌড়ে যাই সেখানে। গিয়ে দেখি সত্যিই আমার মেয়ের গলা কাটা লাশ পড়ে আছে। এসব বলতে বলতে তিনি বারবার চোখের পানিতে বুক বাসিয়ে প্রশাসনের সু- দৃষ্টি কামনা করে কান্না জড়িত কন্ঠে তার মেয়ে হত্যাকারীদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবী জানান।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানা ও পিবিআই’র সূত্রে আরো জানাযায়, নিহতের বাবা সুফি মিয়া গত ২৮ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ থানায় ৩০২/৩৪ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলা নাম্বার ১২। উক্ত মামলাটি পেনাল কোর্ডে রুজু হয়। এতে গত ২৯ডিসেম্বর এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি হবিগঞ্জ জেলার পিবিআই অধিগ্রহণ করে। এতে পিবিআই’র ডিআইজি বিপিএম (বার), পিপিএম বনজ কুমার মজুমদার এর দিক নির্দেশনায় হবিগঞ্জ পিবিআই ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ আল মামুন শিকদারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ- পুলিশ সুপার পরির্দশক আব্দুল আহাদ গত ২৯ ডিসেম্বর এই চাঞ্চল্যকর মামলাটির কার্যক্রম শুরু করেন। তদন্ত শুরু করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আসামী সনাক্ত হয়ে যায়। ৩০ ডিসেম্বর হতাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য মাঠে নামে হবিগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের সময় পুলিশ পরিদর্শক বিপিএম মোঃ আব্দুল মালিক, এসআই আব্দুল আহাদ, এসআই শাহনেওয়াজ, এসআই বাপ্পু, এসআই সঞ্জয়, এএসআই এনামুল, এএসআই রিয়াজ সহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হরিনগর গ্রামের মিরাজ উদ্দিনের পুত্র বাস হেলপার খলিল উদ্দিন (২০) ও একই গ্রামের মৃত ইরশাদ উল্লা’র পুত্র সবজি বিক্রেতা গোলাম হোসেন (৫০)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারের পর পিবিআই’র জিঞ্জাসাবাদে আসামী খলিল উদ্দিন ঘটনার বর্ণনা দেয়। সে জানায়, জুবা আক্তারের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জুবা আক্তার রিমা পরিচয় দিয়ে তারা দুজন প্রেম করতো। রিমার ছন্দ নাম ও মোবাইল নাম্বার আসামি গোলাম হোসেনকে দিয়ে খলিল প্রদান করে। জুবা ওরপে রীমা মোবাইল ফোন পেয়ে খলিলের সাথে কথোপনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। রীমা হত্যার প্রায় ১৫/১৬ দিন পূর্বে ঐ স্থানেই মধ্য রাতে তারা প্রেমিক প্রেমিকা দেখা করতে আসে। তখন তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়। হত্যাকান্ডের আগের দিন প্রেমিকা রীমা ফোন করে তার প্রেমিক খলিলকে বলে সে অসুস্থ, তার টাকা লাগবে। উত্তরে খলিল রীমাকে ২ হাজার টাকা দিবে বলে আশ্বাস দিয়ে বলে, রাতে দেখা করে টাকা নিও। এরপর সন্ধা বেলায় গোলাম হোসেন ও খলিলের মধ্যে দেখা স্বাক্ষাত হয়। এবং খলিল গোলাম হোসেনকে বলে আজ রাতে রীমার সাথে দেখা করতে যাবো৷ আমার সাথে যেতে হবে। এ কথা শুনে গোলাম হোসেন রাজি হয়ে যায়। পরে ২৭ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে খলিল ও গোলাম হোসেন ঘটনাস্থলে যায়। তারা যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই রীমা চলে আসে। রীমা আসার সাথে সাথেই গোলাম হোসেন আড়ালে লুকিয়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা প্রেমিক প্রেমিকা দৈহিক মেলামেশা করতে থাকে। তাদের মেলামেশার পরপরই গোলাম হোসেন দৌড়ে তাদের কাছে আসে। এবং রীমার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করার জন্য দস্তাদস্তি শুরু করে। এতে জুবা আক্তার রীমা বাধা দেয়। এ সময় রীমার প্রেমিক খলিলও রীমাকে অনুরুধ করে বলে, গোলাম হোসেনের সাথে তুমি শারিরীক সম্পর্ক করো ৷ এতে সে রাজি না হওয়ায় তারা দুজনই উত্তেজিত হয়ে গোলাম হোসেন জুবা’র গলার ওড়না দিয়ে হাত, পা বেধেঁ তার গলায় পেচানো ওড়নার একদিকে গোলাম হোসেন অন্যদিকে খলিল টানতে থাকে। এতে রীমা শ্বাসরোদ্ধ হয়ে মাঠিতে পড়ে যায়। পরে ঘাতকদের সাথে থাকা ব্লাড দিয়ে গলা কেটে রীমাকে হত্যা করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ বিষয়ে আসামি খলিল উদ্দিন গতকাল বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ দারায় জবানবন্দি দিয়ে তার দোষ স্বীকার করে।