কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর ধামইরহাট থানার ফার্সিপাড়া গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতনে শহীদ হন অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ও ইউনুছ আলী মন্ডল। তাদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের হোগলবাড়িতে। এরমধ্যে এ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি শহীদ ইউনুছ আলী মন্ডলের। তাদের কবরটি অযন্তে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ফার্সিপাড়ার বাসিন্দা ও নিহতের স্বজনরা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়াসহ কবরটি বাঁধায়ের দাবী জানানো হয়েছে।
১৯৭১ সালে ১০ মে ভারতের পতিরাম ইউথ ক্যাম্প ও মধুপুর ক্যাম্প হতে যথাক্রমে ২১ ও ২৮ দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ভারতের শিলিগুড়ি জেলার পানিঘাটায় সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে তরঙ্গপুর থেকে অস্ত্র গ্রহণ করে, ভারতের মারাটা ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ক্যাপ্টেন রায় সিংহের নেতৃত্বে ই,পি, আর আনছার মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত বহু সংখ্যক সৈন্য নিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশের সময় বাংলাদেশের ফার্সিপাড়া নামক স্থানে পাক- বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে আবর্তীন হয়। রক্তক্ষয় সংঘর্ষে বহু সংখ্যক পাক হানাদার বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। সেই সময় সম্মুখ যুদ্ধে বেশ কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ইউনুস আলী মন্ডল শহীদ হন। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তাকে ফার্সিপাড়াতেই কবর দেয়া হয়। সেখানে তার কবর বাঁধানো আছে।
পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ১৮ অক্টোবরে জেলা ইউনিট কমান্ড, অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিক, আইনজীবি ও বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিততে ওই কবরে স্মৃতি স্তম্ভ ও ফলক লাগানো হয়। পরে শহীদ আব্দুল জব্বারকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পায় । যথারীতি শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহীদ আব্দুল জব্বারের পরিবারের সদস্যরা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানীভাতা পেয়ে আসছেন। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ আলী মন্ডলের।
স্থানীয় ব্যক্তি মাজেদুল ইসলাম বলেন, এক কবরে দুইজন শহীদকে সমাহিত করা হয়েছে। কবরটি আমার সম্পত্তির ওপর আছে। বেশ কয়েক বছর আগে কবরটি তারা ব্যক্তিগত ভাবে বাঁধাই করেছেন। তবে কবরটি অরক্ষিত ও জরাজীর্ন ভাবে আছে। শহীদদের স্বজনদের বাড়ি অনেক দুরে হওয়ায় আমরা যতটুকু পারি হেফাজতে রাখার চেষ্টা করি। সরকারে কাছে দাবী কবরটি সংরক্ষণ করা হোক।
শহীদ ইউনুছ আলী মন্ডলের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনেক চেষ্টার পরও বাবার নাম শহীদদের তালিকাভুক্ত করতে পারিনি। ২০১৭ ও ২০২০ সালে উপজেলায় যাচাই-বাছাইয়ের পর বাবার নাম ‘ক’ তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর গত ৪ মার্চে বগুড়া সার্কিট হাউজে সম্মেলন কক্ষে যাচাই-বাছাই কমিটির পরামর্শক্রমে পুনরায় বাবার কাগজপত্রাদি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাচাই বাছাই অন্তে গেজেটভুক্তি করার জন্য আবেদন করেছি। বাবাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির দাবী জানাচ্ছি।
ধামইরহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার অফির উদ্দিন বলেন, ওই দুইজনকে শহীদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং ১৯৯৭ সালের ১৮ অক্টোবরে তাদের কবরে স্মৃতিস্তম্ভ ও ফলক লাগানো হয়। দুইজনের মধ্যে একজনকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু ইউনুছ আলী মন্ডলের স্বীকৃতি মেলেনি। সরকার ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে দাবী ইউনুছ আলী মন্ডলকে শহীদের মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গনপতি রায় বলেন, শুনেছি ফার্সিপাড়ায় একটি শহীদদের কবর আছে। তবে তাদের বিষয়ে কিছুই জানিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদের তালিকা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।