তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: প্রতিবছরের মতো এবারও হাকালুকি হাওরে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। এতে মুখরিত হয়ে ওঠেছে হাওর এলাকা। পাখি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন পর্যটক পাখি প্রেমি মানুষ।
এদিকে, হাওরে পাখি আসা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে ওঠেছে পাখি শিকারি চক্র। তারা বিষটোপসহ নানাভাবে ফাঁদ পেতে অবাধে পাখি শিকার করছে। কিন্তু পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগই নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে পাখি শিকার কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাখিপ্রেমী ও স্থানীয়রা। তারা পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে হাকালুকি হাওরে নানা প্রজাতির পাখি আসে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, ভুতিহাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, গুটি ইগল, কাস্তেচড়া, কুড়া ইগল, সরালি, পানভুলানি, কালিম, সাদা বক, কানি বক, পানকৌড়ি। এরমধ্যে দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের পাখি রয়েছে।
রোববার শীতের তীব্রতা যেমন ছিল তেমনি ঘুরে আসার ছলে বিকেলে সরেজমিন হাকালুকি হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, হাওরে দল বেঁধে নানা প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য, ওড়াওড়ি করছে। কিছু পাখি বিভিন্ন বিল থেকে খাবার খাচ্ছে। কিছু পাখি খাবার শেষে নীড়ে ফিরছে। হাওরের বিভিন্ন বাড়ির গাছগাছালিতে এসব পাখি বাসা বেঁধেছে। পাখিদের কলকাকলিতে হাওর এলাকা মুখরিত শব্দ আনন্দ ঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে ওঠেছে। বিভিন্নস্থান থেকে মানুষজন পরিবার-পরিজন নিয়ে হাওরে পাখি দেখতে আসছেন। হাওড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বন্ধের দিনে পর্যটকের আনাগোনা চোঁখে পড়ার মতো।
স্থানীয়রা জানান, হাওরে অতিথি পাখি আসার সঙ্গে সঙ্গে পাখি শিকারি চক্র তৎপর হয়ে ওঠেছে। চক্রটি রাত-দিন নানা ভাবে ফাঁদ পেতে শিকারিরা হাওরে পাখি শিকার করছে। ধানের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া তাদের বিষটোপ খেয়ে পাখির পাশাপাশি অনেক খামারির হাঁসও মারা যাচ্ছে। শিকারিরা এসব পাখি বিভিন্ন বাজারেও মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। বিভিন্ন হোটেলে এসব পাখির মাংস বিক্রি হচ্ছে। এমনকি অনেক প্রভাবশালীদেন ঘরেও এসব পাখি যাচ্ছে।
হাওরে বন্ধুদের সঙ্গে পাখি দেখতে আসা ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, হাওরে বন্ধুদের সাথে পাখি দেখতে এসেছি। কারণ এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা জাতের পাখি আসে। এখানে এসে পাখিদের ওড়াওড়ি আর কিচিরমিচির শব্দ শুনে মন ভালো হয়ে যায়। তবে, এখানে প্রায় বিভিন্নভাবে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার হচ্ছে। এর কারণে আগের তুলনায় পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। প্রশাসনের উচিত পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
হাওরের হাল্লা গ্রামের বাসিন্দা আক্তার আহমদ শিপু ও হিমেল আহমদ বলেন, হাওরে প্রতিবছরের মতো এবারও অতিথি পাখি আসছে। এসব পাখির নিরাপধ আবাসস্থল আমাদের বাড়ি। তারা আমাদের বাড়ির চারপাশে থাকা গাছে বাসা বাধার পাশাপাশি ঘরের টিনেও বসছে। পাখিগুলোকে আমরা তাড়িয়ে দেইনা। যার কারণে বছরজুড়ে পাখিগুলো আমাদের বাড়িতে থাকে। শুধু শীতে দেশের বাইরে থেকে অতিথি পাখি আসে।
তিনি বলেন, পাখি শিকার বন্ধে আমরা অনেক সময় রাতে পাহারা দেই। এরপরও শিকারিরা পাখি শিকার করছে নানাভাবে ফাঁদ পেতে। পাখি শিকারে বাধা দিলে অনেকে হুমকি দেয়। তাই অনেক সময় ভয়ে কথা বলিনা। প্রশাসন যদি এখানে (হাওরে) স্থায়ীভাবে লোকজন দেয় তাহলে হয়তো কেউ পাখি মারতে পারবে না।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী সোহেল শ্যাম, খোকন থৌনাউজম- Stand For Our Endangered Wildlife (S E W) বন্যপ্রাণী সুরক্ষা ও সংরক্ষণে কাজ করা সেচ্ছাসেবী সংগঠনের তারা বলেন, হাওরে পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। এর কারণ হচ্ছে, অবাধে পাখি শিকার, পাখির আবাস্থল ধ্বংস ও খাদ্য সংকট। পাখি শিকার বন্ধ না হলে এখানে পাখি আর আসবে না। তা রোধ করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় মানুষকে সচেতন করতে হবে।
বনবিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেবনাথ বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, পাখি শিকার বন্ধে আমরা কাজ করছি। মানুষকে সচেতন করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, শীতকালে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখি আসে। অতিথি পাখি হাওরের জীববৈচিত্র্যের একটা অংশ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। পাখি শিকার রোধে আমরা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরপর যদি কেউ পাখি শিকার করে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো এবং অনেক বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করেন এমন কিছু সংগঠন আছে উনাদের মাধ্যমে আমরা সহযোগিতা পাই এবং তাদের ভূমিকা অনেকাংশে চোঁখে পড়ার মতো।