কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আটক প্রতারক চক্রের সদস্য মোঃ আবুল কাশেম (৩২), কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানাধীন সোনাইকুন্ডি মাদ্রাসা পাড়া এলাকার মৃত ফরিদ আলী মন্ডলের ছেলে।
কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক লিখিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম।
কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম জানান, গত ২ নভেম্বর থেকে কুষ্টিয়া জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে গত ১ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানাধীন সোনাইকুন্ডি মাদ্রাসা পাড়া এলাকার মৃত ফরিদ আলী মন্ডলের ছেলে মোঃ আবুল কাশেম (৩২) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনৈক চাকুরী প্রার্থীকে জানায়, যে টাকা পয়সা খরচ করলে সে তাকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরী দিতে পারবে। এ কথা বলে উক্ত আসামী চাকুরী প্রার্থীকে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থানাধীন ভেড়ামারা বাসস্টান্ডে দেখা করতে বলে। পরে প্রতারক আবুল কাসেমের কথায় সরল বিশ্বাসে চাকুরী প্রার্থী ও তার পিতা গত ১ নভেম্বর বিকাল ৫ টায় ভেড়ামারা বাসস্টান্ডে সাক্ষাত করলে আবুল কাসেম তাদেরকে জানায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরী পেতে হলে ১০ লক্ষ টাকা লাগবে।
এ সময় কুষ্টিয়া জেলার এসপি স্যারের সাথে সরাসরি সাক্ষাত করিয়ে দেয়ার কথা বলে প্রতারক আবুল কাসেম তার মোটর সাইকেলে করে প্রার্থী ও তার পিতাকে কুষ্টিয়া শহরে নিয়ে গিয়ে এসপি পরিচয়দানকারী ও কুষ্টিয়া পু্লিশ লাইন্স স্কুলের শিক্ষক পরিচয়দানকারী দুই অজ্ঞাত নামা ব্যাক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এ সময় তারা ৩ জনই প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার পরপরই ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে জানায়।
পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম গত ২ নভেম্বর হতে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন পরীক্ষা চলাকালীন সকালে ও বিকালে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের নিয়োগ বানিজ্যের প্রতারক চক্রের সদস্যদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন এবং প্রতারক চক্র যোগাযোগ করলে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আহবান করেন। এ ব্যাপারে তথ্য পাওয়ার সাথে সাথেই স্থানীয় পুলিশ ইউনিটে জানানোর জন্য বলেন।
পুলিশ সুপার কুষ্টিয়া ও নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি মোঃ খাইরুল আলম পরীক্ষার্থীদের বলেন, কনস্টেবল পদের চাকুরি অবশ্যই মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়নেই হবে। পুলিশ সুপার পরীক্ষার্থীদের সাবধান করে আরো বলেন যদি কেউ প্রতারক বা দালালদের সাথে যোগাযোগ করে বা টাকা পয়সা লেনদেন করে তাহলে তিনি জানতে পারলে তার নিয়োগ বাতিল করা হবে মর্মে বারবার উল্লেখ করেন। এই কথায় পরীক্ষার্থীরা বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং এরই মাঝে পরীক্ষার্থী ও তার পরিবার বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারে যে কুষ্টিয়ায় চলমান পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে কোন অবৈধ টাকার লেনদেন হচ্ছেনা।
এদিকে প্রতারক আবুল কাশেম পরীক্ষার্থী ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে বার বার যোগাযোগ করতে থাকলে এক পর্যায়ে পরীক্ষার্থী ও তার পরিবার বুঝতে পারে যে তারা একটি প্রতারক চক্র। পরে পরীক্ষার্থী বিষয়টি ভেড়ামারা থানাকে অবহিত করে।
এ সময় থানা পু্লিশ পরীক্ষার্থীকে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিতে বললে পরীক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে এসপি মোঃ খাইরুল আলমের নির্দেশে ভেড়ামারা থানার এস আই দীপন কুমারঘোষ বাদী হয়ে প্রতারক আবুল কাশেমসহ আসামীদের বিরুদ্ধে ৬ নভেম্বর ভেড়ামারা থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি আরো জানান, আইজিপি মহোদয়ের স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে পু্লিশ সুপার কুষ্টিয়া মোঃ খাইরুল আলমের সার্বিক নির্দেশনায় ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইয়াসির আরাফাত এর তত্বাবধায়নে অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এস আই দীনেশ কুমার ঘোষ ও দৌলতপুর থানার ৭ নং হুগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের বিট অফিসার অরুন কুমার দাস এবং সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় প্রতারক আবুল কাশেমকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানাধীন আল্লার দর্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে ৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭ঃ১৫ ঘটিকায় গ্রেফতার করা হয়।
কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক আবুল কাশেম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।