প্রযুক্তি ডেস্কঃ প্রায় ৬ বছর আগে মাইক্রোসফট অবমুক্ত করেছিল উইন্ডোজ ১০। আর উইন্ডোজের নতুন সংস্করণ হিসেবে উইন্ডোজ-১১ গত মাসের শুরুর দিকে বাজারে এসেছে। উইন্ডোজের এই নতুন সংস্করণটিতে যুক্ত হয়েছে একগুচ্ছ নতুন ফিচার। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কম্পিউটারে নতুন এই অপারেটিং সিস্টেম আপডেটের বার্তা জানিয়ে দিলেও এখনো সিংহভাগ কম্পিউটারে উইন্ডোজ ১১ আপডেটের বার্তা আসেনি।
তবে অনেক ব্যবহারকারী সংশয়ে আছে অপারেটিং সিস্টেমে উইন্ডোজ ১০ থেকে উইন্ডোজ ১১তে যাওয়া নিয়ে। অনেকের মনেই অনেক প্রশ্ন জাগছে। কি কি নতুন থাকছে উইন্ডোজ ১১তে? এটি কম্পিউটারে চালাতে হার্ডওয়্যার কনফিগারেশশন কেমন হতে হবে? সব কম্পিউটারে চলবে কিনা?
যদিও উইন্ডোজ ১০ থেকে ১১তে যাওয়ার জন্য ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় পাবেন ইউজাররা, তবে নিজেকে আপডেটেড রাখতে চান টেক স্মার্টরা। উইন্ডোজ ৭ ও ৮ ব্যবহারকারীদের মতো উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীরাও বিনামূল্যে উইন্ডোজ ১১-তে আপডেট করতে পারবেন। উইন্ডোজ ১১ আপডেট পেতে কম্পিউটারটিকে কমপক্ষে ৬৪ বিট সিপিইউ, ৪ জিবি র্যাম এবং ৬৪ জিবি স্টোরেজ সংবলিত হতে হবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক উইন্ডোজ ১১-তে নতুন কী কী থাকছে?
স্টার্ট বাটনঃ উইন্ডোজ ১১-এ রয়েছে নতুন, সহজ ইন্টারফেসসহ সাবলীল সব ফিচার। এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় স্ক্রিনের কেন্দ্রে থাকা স্টার্ট বাটনটি। এই বাটনটি উইন্ডোজের আগের সব ভার্সনে বাঁ পাশে দেখা যেত। অ্যাপলের ম্যাক ওএসের মতো এখন মাঝে থাকায় ব্যবহারকারীরা সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় অপশনগুলো খুঁজে নিতে পারবেন।
স্টার্ট বাটনের সঙ্গে ক্লাউড ও মাইক্রোসফট ৩৬৫ এর সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে আপনি ওই একই ই-মেইল আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিভাইস ও প্ল্যাটফর্মে কাজ করে এখানে ফিরে এসে সেখানে ব্যবহার করা সর্বশেষ ফাইল সামনে দেখতে পাবেন। ফলে ব্যবহারকারীরা অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস বা অন্য কম্পিউটারে কাজ করা সর্বশেষ ডকুমেন্ট সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন।
তবে স্টার্ট বাটনটি যদি মাঝে থাকায় অস্বস্তি বোধ করেন, ঘাবড়াবেন না। আপনি চাইলেই এখনকার মতো বাটনটিকে বাঁ পাশে সরিয়ে আনতে পারবেন।
স্ন্যাপ লে আউট, স্ন্যাপ গ্রুপঃ উইন্ডোজ ১১-এর অত্যন্ত চমৎকার সংযোজন স্ন্যাপ লেআউট, স্ন্যাপ গ্রুপের মতো ফিচারগুলো। আগে কোনো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে হলে একই সময়ে একটির বেশি উইন্ডো ব্যবহার করা যেত না। মাল্টি টাস্কিংয়ের জন্য ‘স্ন্যাপ লে আউট’ নামে নতুন যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে উইন্ডোজ-১১তে তা এর আগে অন্য কোনো অপারেটিং সিস্টেমে দেয়নি উইন্ডোজ। এখন নতুন সংস্করণে ব্যবহারকারীরা নিজেদের পছন্দমতো একই সময়ে অনেকগুলো উইন্ডো ব্যবহার করতে পারবেন।
পাশাপাশি ব্যবহারকারীরা একাধিক অ্যাপ পাশাপাশি রেখে একসঙ্গে সাবলীলভাবে কাজ করতে পারবেন। কোন উইন্ডো স্ক্রিনের কতটুকু জায়গা দখল করবে সেটাও নিজের মতো করে নির্ধারণ ও প্রয়োজনে পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। আলাদা উইন্ডোর জন্য ব্যবহার করা যাবে আলাদা আলাদা থিম। ফলে, সহজেই নিখুঁতভাবে একসঙ্গে অনেক কাজ করা যাবে। বাড়বে কাজের গতি।
ডেস্কটপঃ উইন্ডোজ ১১ আপনাকে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন লেবেলযুক্ত একাধিক ডেস্কটপ তৈরি করতে দেবে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি আপনার শপিংয়ের তালিকা এবং ব্যক্তিগত ই-মেইল দিয়ে একটি ডেস্কটপকে ‘হোম’ হিসেবে তৈরি করে রাখতে পারবেন আবার স্প্রেডশিট, স্ল্যাকস এবং অন্যান্য তালিকা সাজিয়ে আরেকটি ডেস্কটপকে ‘ওয়ার্ক’ হিসেবে আলাদা সাজাতে পারবেন।
উইজেটসঃ উইজেটসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন। উইজেটসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহূত হয়েছে। ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী নির্ধারিত তথ্য নিউজ ফিডে দেখাবে। নতুন উইন্ডোজে মাইক্রোসফট এজের মাধ্যমে আরও স্বচ্ছন্দে ব্রাউজ করা যাবে। মাইক্রোসফটের মেসেজিং অ্যাপ, মাইক্রোসফট টিমসকে উইন্ডোজ ১১-এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ক্যালেন্ডার, ট্রাফিক, খবর বা খেলাধুলা- সবকিছুর জন্যই নতুন উইজেটস যুক্ত হয়েছে উইন্ডোজ ১১তে।
মাইক্রোসফট স্টোরঃ উইন্ডোজ ১১-এর সঙ্গে রয়েছে একেবারেই নতুন মাইক্রোসফট স্টোর, যা বৈচিত্র্য এবং ব্যবহারকারীর স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে। এতে রয়েছে ফার্স্ট ও থার্ড পার্টি অ্যাপের বিস্তৃত ক্যাটালগ। থাকছে আরও সুন্দর ডিজাইন ও ডেভেলপারদের আকৃষ্ট করার মতো সব ফিচার।
ইউনিভার্সাল মিডিয়া কন্ট্রোলঃ উইন্ডোজ ইলেভেন-এ আপনার কম্পিউটারের অ্যাকশন সেন্টারের মাধ্যমে সমস্ত মিডিয়া প্লেব্যাক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আপনি যা কিছুই প্লে করুন না কেন সমস্তটাই কম্পিউটারের অ্যাকশন সেন্টারে প্রদর্শিত হবে। আপনি যে কোনো ইউটিউব ভিডিও, স্পটিফাইতে আপনার প্রিয় গান বা আপনার কম্পিউটারে সংরক্ষিত ভিডিও চালাতে পারেন এবং সেগুলি সবই অ্যাকশন সেন্টারে দেখানো হবে।
রিডিজাইন ফাইল এক্সপ্লোরারঃ উইন্ডোজ ১১ একটি আধুনিক চেহারার নতুন ডিজাইন করা ফাইল এক্সপ্লোরারের সাথে এসেছে। এটিতে নতুন আধুনিক আইকন, একটি কনটেক্সট মেনু এবং শীর্ষে একটি নতুন কমান্ড বার আছে। নতুন ডিজাইনটিতে ফাইল এক্সপ্লোরারের কার্যকারিতার ওপর বেশী নজর দেওয়া হয়েছে ফলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক সহজ হবে।
কম্পিউটারে অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাপঃ অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাপ কম্পিউটারে না পাওয়ার আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেবে উইন্ডোজ ১১ ব্যবহারকারীদের। প্রথমবারের মতো অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাপগুলোও এখন থেকে মাইক্রোসফট স্টোরে পাওয়া যাবে। এই অসাধারণ ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছে মাইক্রোসফট ও অ্যামাজনের পার্টনারশিপের মাধ্যমে।
এখন থেকে অ্যামাজন অ্যাপ স্টোরে থাকা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপগুলো সরাসরি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবে নতুন উইন্ডোজ ১১ ব্যবহারকারীরা।
অ্যাপ অ্যাসিউরঃ উইন্ডোজ ১০-এর মতোই উইন্ডোজ ১১-তেও অ্যাপ অ্যাসিউরের মাধ্যমে অ্যাপের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে বরাবরের মতো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মাইক্রোসফট। অ্যাপ অ্যাসিউরের মাধ্যমে অতিরিক্ত কোনো খরচ ছাড়াই ১৫০ বা তারও বেশি অ্যাপবিষয়ক সমস্যার সমাধান করবে প্রতিষ্ঠানটি।
সুরক্ষাঃ অনলাইন ও অফলাইনে কাজের সমন্বয় করতে এবং সুরক্ষিত অপারেটিং সিস্টেম নিশ্চিত করতে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে উইন্ডোজ ১১। এতে বিল্ট ইন সুরক্ষা প্রযুক্তি রয়েছে এবং বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহারে ও তথ্য সুরক্ষিত রাখতে রয়েছে জিরো ট্রাস্ট রেডি অপারেটিং সিস্টেম।
নতুন গেমিং প্রযুক্তিঃ উইন্ডোজ ১১ সিস্টেম হার্ডওয়্যারের কিছু পরিবর্তন আনছে। ফলে উইন্ডোজ সাম্প্রতিক কিছু গেমিং প্রযুক্তি এখন সমর্থন করবে। উইন্ডোজ ১১ ব্যবহারকারীদের দুর্দান্ত গেমিং অভিজ্ঞতা দিতে যুক্ত করেছে ডিরেক্টএক্স ১২ আলটিমেট। এখানে ব্যবহারকারীরা উচ্চ ফ্রেম রেটে অসাধারণ উন্নতমানের গ্রাফিক্স উপভোগ করতে পারবেন।
এ ছাড়া ডিরেক্ট স্টোরেজ লোডিং সময় আরও কমিয়ে আনবে ফলে গেমিং দুনিয়ায় আরও সহজে বিচরণ করতে পারবেন। আরও থাকছে একশর বেশি উচ্চমানসম্পন্ন কম্পিউটার গেম ও নতুন গেম খেলার সুযোগ। তবে তা পেতে গেলে পিসির জন্য এক্সবক্স গেম পাস বা আলটিমেট ক্রেতাদের একজন হতে হবে।
টাস্কবারের সঙ্গে মাইক্রোসফট টিমসঃ টাস্কবারের সঙ্গে মাইক্রোসফট টিমসের সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে উইন্ডোজ ১১ ব্যবহারকারীরা কম্পিউটারের মাধ্যমে তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে আরও সহজে যোগাযোগ করতে পারবেন।
টেক্সট, চ্যাট, ভয়েস অথবা ভিডিওর মাধ্যমে উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইওএসে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। আলাদা কোনো অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে না। টিমস অ্যাপ ব্যবহার করে না এমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য আছে টু-ওয়ে-এসএমএস সার্ভিস। ব্যবহারকারীরা টাস্কবার থেকে সরাসরি টিমস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
ডেভেলপারদের জন্যঃ মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ১১-এর মাধ্যমে ক্রিয়েটর ও ডেভেলপারদের জন্য আরও উন্মুক্ত ইকোসিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ডেভেলপাররা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও অনেক বেশি অ্যাপ, গেম, মুভি, টিভি শো এবং ওয়েব কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন। ডেভেলপার ও স্বাধীন সফটওয়্যার ভেন্ডরস অ্যাপ (আইএসভিএস) তাদের অ্যাপগুলো মাইক্রোসফট স্টোরে আনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে উইন৩২ কিংবা প্রোগ্রেসিভ ওয়েব অ্যাপ (পিডব্লিউএ) ফ্রেমওয়ার্ক কোনো বাধা হবে না। মাইক্রোসফটের রেভিনিউ শেয়ার নীতি পরিবর্তনের ফলে ডেভেলপাররা তাদের শতভাগ ব্যবসায়িক রেভিনিউ পাবেন। অ্যাপ ডেভেলপাররা এখনও ৮৫/১৫ রেভিনিউ শেয়ারে মাইক্রোসফটের বাণিজ্যিক ইকোসিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন। মাইক্রোসফট এটাকে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন মনে করছে।
অন্যান্যঃ বড় সাইজের স্ক্রিন যুক্ত ডিভাইসের জন্য উইন্ডোজ ১১ উন্নতমানের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া উন্নতমানের ভয়েস টাইপিং ফিচারও আসতে যাচ্ছে উইন্ডোজ ১১তে। যুক্ত হয়েছে অটো এইচডিআর, যার ফলে আরও ভলো গেমিং উপভোগ করতে পারবেন উইন্ডোজ ১১ ব্যবহারকারীরা।