আমরা যখন ডিজনি সিনেমার কোন রাজকন্যা কে দেখি, তখন তাদের অপরূপ চুল থেকে দৃষ্টি সরানো কষ্টকর হয়ে যায়। আর তখন যে কারোরই মন চাইতে পারে এমন সুন্দর চুলের অধিকারী হয়ে সিন্ডারেলা, স্নো হোয়াইট অথবা জেসমিন সাজতে। কিন্তু তার জন্য প্রথমেই তো আমাদের দরকার সুস্থ এবং উজ্জ্বল চুল। আর এখন আমাদের দেশের আবহাওয়ার বর্তমান যে অবস্থা তাতে তো চুলকে সুস্থ রাখতে পারাটাই একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে!
মেয়েদের সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি অংশ হচ্ছে চুল। সেই কারণেই বিশেষত মেয়েদের বা নারীর রুপ বর্ণনায় দীঘল কালো চুলের কথা সবার প্রথমে বলা হয়। তাই চুলের যত্ন নিতে শুরুতেই আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য জেনে রাখা উচিত। অনেকেই আবার এই চুলের যত্ন নিতে গিয়ে করে ফেলেন নানা রকম ভুল। যার ফলে টাকা পয়সা এবং চুল দুটোই অবশেষে হারাতে হয় অসময়ে। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে চুলেরে যত্ন নিন কোন রকম ঝুঁকি ছাড়া। কিন্তু আপনার সঠিক ব্যবহারবিধি জেনে তারপর তা ব্যবহার করা উচিত। আর এই বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের আজকের এই পোস্ট।
আজকে এখানে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনার চুলকে ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়ে পাতলা থেকে ঘনকালো করবেন। তাহলে আসুন জেনে নেই চুল ঘন করার ঘরোয়া পদ্ধতি।
ঘরোয়া উপায়ে পাতলা চুল ঘন করার ৬টি প্রাকৃতিক উপায়
(১) ঘরোয়া উপায়ে চুল ঘন করার উপায়: ডিমের সাদা অংশ
চুলের রুক্ষতা কাটিয়ে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে ডিম খুবই উপকারী। এটি চুলকে খুব সুন্দর করে ময়েশ্চারাইজ করে। প্রথমে, ১টি ডিমের সাদা অংশের সাথে ৩ টেবিল চামচ জল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি চুলে লাগানোর পর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চুল শুকিয়ে গেলে ভালভাবে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না অবশ্যই।
(২) ঘরোয়া উপায়ে চুল ঘন করার উপায়: অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরার গুণের কোন শেষ নেই। চুলের যত্নে এটি বেশ কার্যকরী। সঠিক উপায়ে ব্যবহার করতে পারলে এটি আপনাকে দিবে ঘন ও উজ্জ্বল চুল। এটি চুলের ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ময়েশ্চারাইজার যোগায়। হাতের তালুতে অ্যালোভেরার জেল নিয়ে সরাসরি চুলে লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা সময় দিয়ে চুলটা শুকাতে হবে। তারপরে শ্যাম্পু করে নিন। এটি রীতিমত আপনার হেয়ার ফল কন্ট্রোল করার পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে। সেই সাথে চুলও হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও ঘন। নিয়মিত তা ব্যবহার করলে লক্ষণীয় পরিবর্তন চোখে পড়বে অল্প কিছু দিনের ভেতর।
(৩) ঘরোয়া উপায়ে চুল ঘন করার উপায়: মেথি
আদিযুগ থেকেই চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার হয়ে আসছে। আর এই উপকরণ সবসময় আমাদের হাতের নাগালেই থাকে। আমাদের রান্না ঘরেই আমরা খুব সহজে পেয়ে যাব চুলের যত্নের এই অসাধারণ উপকরণ। প্রথেমে মেথি একরাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরদিন সকালে ভালোভাবে বেটে নিয়ে চুলের গোঁড়ায় লাগিয়ে রাখতে হবে এক ঘণ্টার মতো। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। মেথি আপনার চুল ঘন তো করবেই পাশাপাশি চুল হবে নরম ও শাইনি। সপ্তাহে মাত্র একদিন ব্যবহার করলেই এক মাসেই তার কার্যকরী ফল পাবেন।
(৪) ঘরোয়া উপায়ে চুল ঘন করার উপায়: আমলকি
চুলের যত্নে আমলকি খুবই কার্যকরী এবং এর ব্যবহার বহুবিধ। এটি চুলের গোঁড়া শক্ত করে চুল পড়া রোধ করে, চুলের বৃদ্ধি বাড়ে, চুল সাদা হওয়া থেকে রক্ষা করে, চুলের স্বাভাবিক রঙ ঠিক রাখে ও চুলকে উজ্জ্বল করে।
এছাড়া, বাজার থেকে আমলা তেল না কিনে নিজের ঘরেই খুব সহজে আমলা তেল তৈরি করে নেয়া যায়। এছাড়াও বাজারে আমলকির গুঁড়া কেনা পাওয়া যায় সেটাও চুলের প্যাকের সাথে ব্যবহার করতে পারেন। তবে আমলা তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় চুলের যত্নে।
(৫) ঘরোয়া উপায়ে চুল ঘন করার উপায়: জবা ফুল
জবা ফুল চুল ঘন করার পাশাপাশি অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করে। জবা ফুলের পেস্ট তৈরি করে নারকেল তেলের সাথে তা মিশিয়ে চুলের গোঁড়ায় লাগিয়ে রাখুন বিশ মিনিট। এরপরে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
(৬) ঘরোয়া উপায়ে চুল ঘন করার উপায়: হেনা বা মেহেদি
চুলের যত্নে হেনা ন্যাচারাল ভলিউমাইজার হিসেবে কাজ করে। চুলের যত্নে হেনা ব্যবহার করতে চায়ের লিকার, ডিম, লেবুর রস, এবং টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে নিন হেনা পাউডার। আর এভাবে তৈরি করা এই পেস্টটা ঘণ্টা খানিক রেখে দিন। তারপরে ব্রাশের সাহায্যে আস্তে আস্তে পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। এরপর তা এক ঘণ্টা রেখে এক ঘণ্টা পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
(৭) ঘরোয়া উপায়ে চুল ঘন করার উপায়: ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল খুব পরিচিত একটি হেয়ার অয়েল যা চুল ঘন করার জন্য খুব উপকারী। এছাড়াও এটি স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও প্রোটিন যা চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ও চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।
ক্যাস্টর অয়েল সাথে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলের স্ক্যাল্পে ভাল করে মাসাজ করুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট (রাতে শোয়ার আগে)। সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যাবহার করুন ভালো ফল পেতে।