বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৬ সাল শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৫ সাল শেষে খেলাপি ঋণের পরিমান ছিল ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। সম্প্রতি সংসদে অর্থমন্ত্রী উত্থাপিত কেবল ১০০ শীর্ষ ঋণ খেলাপির নিকট ব্যাংকের পাওনা ১ লাখ ৪ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা । মাথাপিছ ৪৬ হাজার টাকা ঋণের বোঝা নিয়েই বাংলাকে ডিজিটালের লক্ষ্যে ধাবিত হচ্ছে সরকার। আর্থসামাজিক উন্নয়নের ধারা বেগমান করে তোলার লক্ষ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ঘোষণা করে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সব পর্যায়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা বেগবান করে তোলা ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য। দুনিয়ার মানুষ জানে, দেশকে ডিজিটাল বানানোর অভিধায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত হাতে কাজ করছেন তাঁরই সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে সাথে নিয়ে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের বিদ্যমান সমাজকে আরও উন্নত, সমৃদ্ধ ও দারিদ্রমুক্ত করে এখানে ন্যায়বিচার এবং সম্পদের সুষম বণ্টন ও মানুষের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তা বিধান করে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিমনস্ক, আতœবিশ্বাসী ও সফল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এই সমাজে জ্ঞানই হবে সব শক্তির ভিত্তি। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি সুনিন্দ্রি সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। একে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে বিকশিত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে নিতে হবে। দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশটিকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকারের প্রচলিত পদ্ধতির বদলে ডিজিটাল সরকার স্থাপন করতে হবে। ডিজিটাল সরকার বলতে সরকারের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, সরাসরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন রিয়েলটাইম যোগাযোগ এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারের সব কাজ করাকে বোঝায়। এজন্য সরকারের থাকবে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ ও ন্যাশনওয়াইড নেটওয়ার্ক। সরকারের সব তথ্য থাকবে কেন্দ্রীয়/বিকেন্দ্রীকৃত ডাটাবেজে। কেন্দ্রীয়/স্থানীয় ডাটাবেজটির সব তথ্য স্তরভিত্তিক বিন্যস্ত হবে। সরকারের সব অফিস, বিভাগ, মন্ত্রণালয়, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত বা বিধিবদ্ধ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনের সব স্তর এই নেটওয়ার্কে সরাসরি অনলাইনভাবে যুক্ত থাকতে পারে। এমনকি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব পর্যন্ত এই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যেমন- আয়কর-দুর্নীতি দমন কমিশন সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। বাংলাদেশের অফুরান সম্ভাবনা তার তারুণ্য এবং তারুণ্যের কর্মস্পৃহা। এই তরুণ গোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা সহজসাধ্য বিষয় নয়। পপুলেশন ডিভিডেন্ড যেন যথাযথভাবে বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে, সে জন্য নানা ধরনের কর্মকেন্দ্রীক শিক্ষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পৃথিবীর সব দেশেই ডিপ্লোমা শিক্ষার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এদেশেও স্বল্পসংখ্যক রয়েছে ডিপ্লোমা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসএসসি/দাখিল পাসের পর এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা শিক্ষায় দক্ষ হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে ডিপ্লোমা পড়তে হবে ইনস্টিটিউটে। আশ্বর্য হওয়ার বিষয় দেশে জগএ সেক্টরে দক্ষ জনবল না থাকায় প্রায় লক্ষাধিক বিদেশি জনবল ‘হায়ার’ বা ভাড়া করে আনতে হয়। এদের বেশির ভাগই ভারত, শ্রীলঙ্কা আর চীন হতে আগত। এতে করে দেশের মুদ্রা অনায়সে বাইরে চলে যাচ্ছে। ডিপ্লোমা শিক্ষার ব্যবহার ছাড়া আমাদের দেশে জগএ সহ প্রায় সব ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান অচল। এজন্য এ পেশায় রয়েছে ব্যাপক চাহিদা ও সফলতার হাতছানি। তরুণদের স্বপ্নের ক্যারিয়ারের জন্য নানা বিষয়ে ডিপ্লোমা বেঁছে নেয়াটাই বুদ্ধিদীপ্ত কাজ। ডিপ্লোমা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়ন ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা। পাশাপাশি শিক্ষার মাধ্যমেই জাতিকে দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই শিক্ষা সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে গণমুখী, সুলভ, সুষম, সর্বজনীন, সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞান মনস্ক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণকৌশল হিসেবে কাজ করবে। আমাদের দেশে ডিপ্লোমা শিক্ষা ব্যবস্থা যে ভাবে গড়ে উঠা দরকার সেইভাবে গড়ে উঠে নাই। প্রতিটি সরকারই প্রতিদিন মুখে ডিপ্লোমা শিক্ষার গুরুত্ব প্রদান করে বক্তব্য দিচ্ছে। বাস্তবধর্মী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। উন্নত বিশ্বে যেখানে ডিপ্লোমা শিক্ষার হার ৬০ শতাংশে সেখানে বাংলাদেশ এই হার ৪ শতাংশ। ১ কোটি ১০ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ বেকারের বোঝা জাতি বহন করছে। তারা উৎপাদনের সহিত জড়িত না। জাতি ও তাদের সৃষ্টিশীলতা সৃজনশীলতা থেকে বঞ্চিত। এ সমস্ত তরুণকে ডিপ্লোমা শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলতে পারলে নিজ এলাকা/গ্রামে শিল্প কারখানা, হাসপাতাল, খামার, ক্লিনিক গড়ে তোলে সরকারের রাজস্ব গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটাতে পারতো। আমাদের সোনার বাংলাদেশকে সত্যিকারের ডিজিটাল করতে গেলে আমাদের সব ক্ষেত্রেই মনোযোগ দিতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির জন্য একটি নতুন অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। এর নাম হবে নিউ ইকোনমি বা নজেল ইকোনমি বা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি। ডিজিটাল বাংলা হলো শহরে, গ্রামে, জলে, স্থলে, আকশে আধুনিক প্রযুক্তি। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা হলো আধুনিক প্রযুক্তির ধারক-বাহক। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিটিজাল বাংলাদেশ’ পরিণত করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। প্রতিবছর গড়ে ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এর অর্ধেক তরুণকে ডিপ্লোমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে ১০টি সরকারি/বেসরকারিভাব কৃষি, ভেটেরিনারি, লেদার, পলিটেকনিক, টেক্সটাইল, মেডিক্যাল টেকনোলজি, নার্সিং, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মেডিকেল ও ডেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকার প্রতি উপজেলায় একটি করে ভ্রান্তনীতির কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। যেখানে কেবল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার কোর্সকারিকুলাম প্রনয়ণ করা হচ্ছে। ডিপ্লোমার গুরুত্বপূর্ণ হাজারো কোর্সকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সাথে অবহেলা করা হচ্ছে। রাবার, মোবাইল ব্যাংকিং, এয়ারহোস্টেজ, পর্যটন, সাংবাদিকতা, বিমান পরিচালনা, সাবমেরিন, মহাকাশযান, নিউক্লিয়ার ইত্যাদি বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্সসহ সকল পণ্য ও পেশায় কমপক্ষে ৫০০ (পাচঁশত) নতুন ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা প্রয়োজন। ডিপ্লোমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ ও ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর জাতীয়ভাবে জাতীয় ডিপ্লোমা শিক্ষা দিবস পালনের নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। আর তা হলে বাংলার মাটি থেকে বেকার সমস্যা চিরতরে দূর করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করতে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগে ডিপ্লোমা শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রশাসনিক বিভাগে ‘ডিপ্লোমা শিক্ষা বোর্ড’ প্রতিষ্ঠার আইন পবিত্র জাতীয় সংসদে পাশ করতে হবে। ডিপ্লোমা শিক্ষা গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ দাবী করছে- ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট থেকে মাত্র ৮ কোটি টাকা ডিপ্লোমা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠায় বরাদ্ধ।