টিকার নিবন্ধন করেও যারা মেসেজ পাচ্ছেন না, তারা কি
টিকা পাবেনা?
টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করে টিকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন বর্তমানে এক কোটি ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ।
তাদের মধ্যে অনেকে একমাসের বেশি সময় আগে নিবন্ধন করা স্বত্ত্বেও এখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে টিকা গ্রহণের সময়সূচী জানিয়ে কোন খুদে বার্তা তারা পাননি।
যারা টিকা নিয়ে কোন খুদে বার্তা পাননি, তাদের কী হবে?
বাংলাদেশে চলতি বছরের ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে করোনার টিকা দেয়ার কর্মসূচি শুরু হয়। আর বর্তমানে এখন দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত বুধবার পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে প্রায় ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ জন। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৭৩ জন।
তবে টিকা নেয়ার জন্য বর্তমানে নাম নিবন্ধন করেছেন প্রায় ২ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার ৫১৯ জন।
অর্থাৎ হিসাব অনুযায়ী এখনো টিকা পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন এক কোটি ৩৫ লাখ ৫১ হাজার ৭২ জন।
একমাস অপেক্ষা করেও মিলছে না টিকার মেসেজ
ঢাকার এক বাসিন্দা আলমগির মাহমুদ টিকা নিতে সুরক্ষা পোর্টালে নাম নিবন্ধন করেছেন একমাসের চেয়েও বেশি সময় আগে। কিন্তু এখনো তিনি কোন টিকার মেসেজ পাননি।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, ”আমার নিবন্ধন করা হয়েছে ৯ই আগস্ট। তারপর তো একমাসের চেয়েও বেশি সময় পার হয়ে গেল। কিন্তু আমার পরে নাম নিবন্ধন করা স্বত্ত্বেও কতজন টিকা পেয়ে গেল। কিন্তু আমার এখনো কোন মেসেজই এলো না,” তিনি বলছেন।
মেসেজ না পাওয়ায় টিকা গ্রহণ করতে পারবে কিনা তার অনিশ্চয়তায় তিনি চিন্তায় পড়ে গেছেন বলে জানালেন।
তিনি আরও জানান যে, এতদিন হয়ে যাওয়া স্বত্ত্বেও কোন রকম টিকার মেসেজ না পাওয়ায় তিনি পুনরায় আবার ওয়েবসাইট থেকে নিবন্ধনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তখন ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে যে, একবার নিবন্ধন হয়ে যাওয়ায় তিনি আর নতুন করে কোন নিবন্ধন করতে পারবেন না।
এই বিষয় নিয়ে চট্টগ্রামের একটি টিকাদান কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, টিকার নিবন্ধনে নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার পর নিবন্ধনকারীর পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্রে তার তথ্য তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঠানো হয়।
এরপর প্রতিদিনের জন্য টিকাকেন্দ্র সমূহ যে পরিমাণ মানুষ কে টিকা প্রদানের জন্য বরাদ্দ করে, ঠিক সেই সংখ্যক মানুষকে টিকা নিতে আসার জন্য ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সফটওয়্যার ব্যবহার করে সাধারণত আগের দিন করে এসব বার্তা পাঠানো হয়।
এজন্য টিকা নিবন্ধনের যে সিরিয়াল এর নিয়ম রয়েছে, সেটি অনুসরণ করেই বার্তা পাঠাতে বলা হয়েছে, বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিএএইচ টিকা বিষয়ক দপ্তরের পরিচালক মোঃ শামসুল হক।
এছাড়াও এই বিষয় নিয়ে এই কর্মকর্তা আরও ধারণা করছেন যে”, যে পরিমাণ মানুষকে টিকা দেয়ার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়, নিবন্ধনের তালিকা তার চেয়ে অনেকখানি বেশি। সম্ভবত এই কারণেই হয়তো অনেকে নিবন্ধন করার পরেও তাদের টিকার ডেট আসছে না,”।
তবে টিকাদান কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, সবসময় এই সিরিয়াল অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। কারণ বিভিন্ন সুপারিশে অনেকের টিকা নেয়ার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসা হয়ে থাকে।
তাই এক্ষেত্রে হাতেকলমে এসএমএস পাঠানোর এই পদ্ধতিতে যদি কারও নাম একবার বাদ পড়ে যায়, তাহলে সেটি টের পাওয়ার কোন অবকাশ নেই।
ধরা যাক, একটি কেন্দ্রের টিকা দেয়ার ক্ষমতা যদি হয় ১২০০, তাহলে তার অর্ধেক চলে যায় দ্বিতীয় ডোজ দিতে গিয়ে। বাকিদের প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হলেও সেখানে অগ্রাধিকার পান আগে এসএমএস পাওয়া ব্যক্তিরা, বয়স্ক, বিদেশযাত্রী, নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।”
কিন্তু এখানে বয়সসীমা কমিয়ে দেয়ায় টিকা যতটা দিতে পারছে, তার চেয়ে টিকার নিবন্ধন দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এই কারণে অনেকের এসএমএস পেতে একটু দেরি হচ্ছে।
আর কিছু কেন্দ্রে ভিড় বেশি থাকায় সেখানে এই দীর্ঘসূত্রিতা আরও বেশি হয়।
তবে পর্যায়ক্রমে সবাই টিকা পাবেন বলে আশ্বস্ত করছেন এই চিকিৎসক।
আর অপেক্ষা করতে বলছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা
বাংলাদেশের মানুষের টিকাদান নিশ্চিত করতে সম্প্রতি গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সরকার। তবে বেশিরভাগ মানুষ এখনো সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নাম নিবন্ধন করে কেন্দ্রে টিকা নেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরকারের হাতে টিকার মজুদ কম থাকায় সেই তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে।
যারা টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন, পর্যায়ক্রমে সবাই পাবেন। তাই ম্যাসেজ না আসলে একটু অপেক্ষা করতে হবে।