বাংলাদেশের দুই জেলার স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষ বলছেন যে, তাদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সঙ্গে স্কুলে আসা যাওয়ার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।
এখন পর্যন্ত পাওয়া সংবাদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের দুই জেলা ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুল মিলিয়ে মোট ১৪ জন শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা।
তবে এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনি বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বিভিন্ন স্কুলে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিলেও বাস্তবে অনুসন্ধান করে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, প্রতিটি ঘটনা আমলে নিয়ে সরকার গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছে। আর কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগও গ্রহণ করা হচ্ছে।
মূলত দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর এই মাসেই, ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের স্কুল কলেজ খুলে দেয়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিদ্যমান রয়েছে। যদিও সংক্রমণের হার নেমে এসেছে ৪.৫৪ শতাংশে। আর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শিক্ষার্থী
উত্তরবঙ্গের জেলা ঠাকুরগাঁওতে দুইটি পৃথক স্কুলের মোট ১৩ জন শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরা সবাই চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
তবে এরা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও জেলার সরকারি শিশু সদনে তারা একসঙ্গে থাকে।
আর এই বিষয়ে, বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সাংবাদিকদের বলেছেন, কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখার পর তাদের করোনা পরীক্ষা করানো হলে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তখন ওই শিশু সদনের অন্য শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং সতর্কতা হিসাবে এসব শ্রেণির পাঠদান দুইদিন বন্ধ করে রাখা হয়।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মোঃ মাহফুজুর রহমান সরকার বলেছেন, ”কীভাবে এই ১৩ জন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়েছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো তাদের এক বা দুইজন আগে আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু সবাই একই শিশু সদনে থাকার কারণে তা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও জানান যে, পরবর্তীতে এসব আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের শ্রেণির অন্যদেরও করোনা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে এবং তাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। আর আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের আলাদা করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, মানিকগঞ্জে গত বুধবার করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে অষ্টম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরে তার মৃত্যু হয়। আর স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই শিক্ষার্থী সর্বশেষ ১৫ই সেপ্টেম্বর স্কুলে এসেছিল।
কিন্তু করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যু হলেও পরীক্ষা না করানোয় আসলে তার কোভিড-১৯ ছিল কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এছাড়াও শনিবার তার শ্রেণির অপর শিক্ষার্থীদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন মোঃ আনোয়ারুল আমিন আখন্দ।
আর এর আগের সপ্তাহে একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হলে পাঠদান বন্ধ রেখে তৎক্ষণাৎ ওই শ্রেণির ৫৮ জন শিক্ষার্থীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে তাদের কারও রিপোর্টে করোনা পজিটিভ তা ধরা পড়েনি। ফলে গত বৃহস্পতিবার থেকে আবার বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করা হয়।
শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ
ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জের স্থানীয় সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, এই বিদ্যালয়গুলো ছাড়াও অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের কোভিড-১৯ টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন।
আর শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই উদ্বেগের বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনির বক্তব্যেও।
তিনি শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ”কোন কোন জায়গায় এবং বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে আমাকে লিখে পাঠাচ্ছেন, এই স্কুলে এতজন আক্রান্ত, ওই স্কুলে এতজন আক্রান্ত। আমরা সাথে সাথে প্রতিটা জায়গায় অনুসন্ধান করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।”
ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে সরকার।
এই বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলছেন, ”প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়ার খবর পাওয়ার পরে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। অন্য শিক্ষার্থী কারও মধ্যে কোন উপসর্গ আছে কিনা সেদিকেও আমরা নিয়মিত নজর রাখছি।”
তিনি আরও জানান যে, দেশের সব স্কুলের শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যেন তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা যেন আলোচনা করেন। এতে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের কোন উপসর্গ আছে কিনা, পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়েছে কিনা, ইত্যাদি তথ্য নিয়ে যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।