নিজ দেশের সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানে আটক হওয়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। শুক্রবার (০১ মার্চ) পাকিস্তানের জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও টেপে অভিনন্দনকে বলতে শোনা যায়, ‘ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যে কোনো বিষয়ে বাড়িয়ে বলে।’
অভিনন্দন বলেন, ‘ভারতীয় মিডিয়া সব সময় যে কোনো কিছুকে বাড়িয়ে বলে। ছোট ঘটনাকে এত আগুন লাগিয়ে, মসলা লাগিয়ে তারা প্রচার করে যে তাতে মানুষ ভুল পথে পরিচালিত হয়।’
কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে চলতে থাকে পরোক্ষ লড়াই। এমনকি বুধবার সংঘটিত ‘বিমানযুদ্ধ’ নিয়েও দুই দেশের সংবাদমাধ্যমে এক ধরনের রেষারেষি দেখা গেছে।
এরমধ্যেই আটক অভিনন্দনের দু’টি ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তান সিআরপিএল। একটি ভিডিও তাকে আটকের সময়কার এবং অপর ভিডিওটি দেখা যায়, পাকিস্তানি এক সেনাসদস্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এরপর আজ অভিনন্দনকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করার আগে আরো একটি ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তান। যেখানে নিজ দেশের সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করতে শোনা যায় অভিনন্দনকে।
এদিকে প্রায় ৫৮ ঘণ্টা পর দেশের মাটিতে পা রেখেছেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন। শুক্রবার(০১ মার্চ) রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে তাকে নিয়ে দেশে ফেরেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি কনভয়ে ওয়াঘা সীমান্তে নিয়ে আসা হয় অভিনন্দনকে। সেখানে মেডিকেল চেকআপ করা হয় তাকে। এরপর পাকিস্তানি রেঞ্জার্সের ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’-এর পরই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয় অভিনন্দনকে। তবে, কিছু প্রক্রিয়া সারতে দেরি হওয়ায় তার দেশে ফেরা বিলম্বিত হয়।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির পার্লামেন্টে অভিনন্দনকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, শান্তিপ্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যেতেই এই উদ্যোগ। আর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের এ পদক্ষেপের ভিন্ন অর্থ দেখতে পাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, জেনেভা কনভেনশন অনুসারে তাকে ছাড়া হচ্ছে। এতে সমঝোতা বা অন্য কোনো বিষয় নেই।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর সূত্রে ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান।
এদিকে পাকিস্তানের ডন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বৈমানিককে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণার পর পাকিস্তানের সব দল ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশংসা পেয়েছেন। এ ছাড়া ভারতকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ায় ইমরান খানকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান।
আর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। সেই অধিবেশনেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন।