রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকেই আলোচনায় রয়েছে “রোহিঙ্গাদেরকে কি মিয়ানমার কখনো ফেরত নিবে না।” ইতিমধ্যে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়েছে।কিন্তু কবে থেকে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা এখনো বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গারা হল বাস্তুচ্যুত, বিশ্ব ব্যাংকের শরণার্থী নীতি তাদের জন্য নয়।”তিনি আরও জানিয়েছেন শরণার্থী নীতি সংস্কার নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রস্তাবিত রূপরেখা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ‘বাস্তুচ্যুত’ রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হওয়ায় সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, বাংলাদেশের বিবেচনায় রোহিঙ্গারা ‘শরণার্থী’ না হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনের বিষয়গুলো প্রযোজ্য নয়।
মূলত তিনি বলতে চেয়েছিলেন এই যে, “আমরা যে রোহিঙ্গাদের রেখেছি, তারা আমাদের সংজ্ঞাের্থে শরণার্থী না। তারা হচ্ছে নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত জনগণ, আমরা কিছুদিনের জন্য তাদেরকে এখানে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের অগ্রাধিকার ইস্যু হচ্ছে তারা কবে ফিরে যাবে”।
এছাড়াও তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারও বলেছে, তাদেরকে নিয়ে যাবে। কিন্তু চার বছর হলো তারা যায় নাই, আবার মিয়ানমারও কিন্তু কখনো বলে নাই তারা তাদের নিবে না। সুতরাং, এরা সাময়িকভাবে আশ্রয় নেওয়া লোক। এখানে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তারা শরণার্থী না।”
এ বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্ব ব্যাংক শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা দেশে অন্তর্ভুক্ত করাসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাবসহ ’রিফিউজি পলিসি রিফর্ম ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আর বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা কার্যালয় থেকে ফ্রেমওয়ার্কের বিষয়ে মতামত চেয়ে জুনের ৩০ তারিখ অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কাজ করা, চলাফেরা, জমি কেনা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হওয়াসহ সব ধরনের আইনি অধিকার শরণার্থীদের দেওয়া সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়েছে।“আমরা এই রিপোর্টটা পুরোপুরি রিজেক্ট করেছি- যেহেতু প্রথমত এরা (রোহিঙ্গারা) শরণার্থী না।”
বিগত কয়েক দশকে মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। আবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যখন ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে ধ্বংসাত্মক হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে তখন আরও সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গার ঢল এসে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে।
এই বিষয়ে, বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে ২০১৯ সালে দুদফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহে তা শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায়। রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ না থাকার কথা তুলে ফিরতে নারাজ দেখায় এই শরণার্থীরা।পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হোক, অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, দুই হাজার কোটি টাকার যে তহবিল তৈরি করেছে, সেখান থেকে এদের জন্য কিছু টাকা দেবেন।বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের সাথে বাংলাদেশের ’চিন্তাভাবনার মোটেও কোথাও মিল নাই’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, এদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য রিইন্টিগ্রেট করতে হবে, সমাজের সঙ্গে।”
”আর আমরা বলেছি, তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তাদেরকে তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে। এটাই একমাত্র বিষয় এবং আপনারা সে ব্যাপারে কাজ করেন।”