বর্তমান যুগে একটি চাকরি যোগাড় করা সোনার হরিণ পাওয়ার চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করা যখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে ঠিক তখনই মানুষ পেশা হিসেবে গ্রহণ করে ফ্রিল্যান্সিংকে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচয় দিত তখন সমাজের লোকেরা নানাভাবে তাকে হেয় করত, তারই প্রতিরোধে বর্তমান সরকার সম্প্রতি ফ্রিল্যান্সারদের তাদের পরিচয় প্রদানের সুবিধার্থে ও সম্মান রক্ষার্থে তাদের প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য আইডি কার্ড এর ব্যবস্থা করেছেন।
এবার জেনে নিন কিভাবে Freelancer হয়ে কাজ করে টাকা উপার্জন করা যায়!
Freelancing শব্দটি আমাদের সকলের কাছেই খুব পরিচিত। অনেকেই হয়তো মনে মনে ফ্রিল্যান্সার হবার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো এখনও জানি না যে, ফ্রিল্যান্সিং বলতে কী বোঝায় বা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে এর থেকে অর্থ উপার্জন করা যায়। আবার আমাদের অনেকেই হয়ত এই পথে পা বাড়িয়ে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো অনভিজ্ঞতা এবং সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন না করা। যার ফলে অনেকেই অনেক উৎসাহের সাথে কাজ শুরু করেও তা থেকে ফিরে আসতে তারা বাধ্য হয়েছে।
মূলত ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে অনেকটাই ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি পেশা। আমাদের আজকের আয়োজন সাজিয়েছি আমরা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে। আজকের লেখনীতে থাকছে ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কেন করবেন ফ্রিল্যান্সিং।
Freelancing কি?
কিভাবে ফ্রিল্যান্সার হবেন এবং ফ্রিল্যান্সার হওয়ার মাধ্যমে টাকা উপার্জন করবেন তা জানার পূর্বে আপনাকে জানতে হবে ফ্রিল্যান্সিং বলতে কী বোঝায়। মূলত ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে মুক্তপেশা এবং ফ্রিল্যান্সার শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ দাঁড়ায় মুক্তপেশাজীবী। এটি হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেট ভিত্তিক এমন একটি কর্মসংস্থান যেখানে ব্যক্তি তার স্বাধীনতা বা ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। অর্থাৎ কোন কোম্পানিতে থেকে নির্দিষ্ট কোন চাকরি করার পরিবর্তে ব্যক্তি তার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। সাধারণত এই কাজগুলো অনেক রকম হয়ে থাকে, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রয়েছে যে কাজগুলো তা হলো- ব্লগ লেখা, অনুবাদ করা, গ্রাফিক্স, গ্রাহক সেবা প্রদান ইত্যাদি।
চাকরির পরিবর্তে কেন করবেন ফ্রিল্যান্সিং?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত ভাল ভাল চাকরি থাকতে আপনি ফ্রিল্যান্সিং কে কেন আপনার পেশা হিসেবে বেছে নিবেন। আসলে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা কোনো নির্দিষ্ট চাকরি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। বরং নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নিজস্ব স্বাধীনতায় কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং অন্যতম একটি যথোপযোগী ক্ষেত্র। আর এক্ষেত্রে আপনি যদি উপার্জনের কথা ভাবেন তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন চাকরিজীবী থেকে একজন ফ্রিল্যান্সার অধিক ইনকাম করে থাকে।
তবে এই ইনকামের পরিমান নির্দিষ্ট নয় বা নির্দিষ্ট থাকে না কারণ প্রতি মাসে ইনকাম বিভিন্ন রকম হতে পারে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার কাজ করার দক্ষতার ওপর। আবার ফ্রিল্যান্সার রা এখানে একসাথে একই সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। ফলে আপনি যদি একসাথে বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হন সেক্ষেত্রে আপনি এখানে আপনার সেই দক্ষতাগুলোকে কে প্রয়োগ করার যথেষ্ট পরিমাণে সুযোগ পাবেন। আর সবথেকে বড় বিষয় এই সেক্টরে কাজ করতে অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো অফিসে যাতায়াত করার প্রয়োজন পড়ে না। বরং এটি আপনি ঘরে বসে, পার্কে বসে অথবা আপনার যেখানে খুশি সেখানে বসেই কাজটি করতে পারবেন।
আর বর্তমান এই যুগে ফ্রিল্যান্সিং এর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে চাকরি পাওয়ার অনিশ্চয়তা। এছাড়াও প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অবস্থায় ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আসতে পারে আপনার জীবনে আশার আলো, হতে পারে আপনার জীবিকার অন্যতম উৎস। এছাড়াও আপনি যদি ইতিমধ্যে কোন পেশায় অথবা চাকরিতে নিয়োজিত থাকেন তাহলে পার্ট টাইম জব হিসেবেও আপনি এটি করতে পারেন। যে কোন পেশার মানুষ যেমন- ছাত্র-শিক্ষক, গৃহিণী, ব্যবসায়ী যেকোনো পেশার মানুষ ফ্রিল্যান্সিং কে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
এখন নিশ্চয় ভাবছেন, ফ্রিল্যান্সিং করে কিভাবে অর্থ উপার্জন করবেন!
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজের ক্ষেত্র আসলে অনেক বিশাল, যা বলে শেষ করা যাবে না। আর এই কাজের ক্ষেত্রগুলো প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আপনি যদি কাজের সঠিক জ্ঞান, স্কিল এবং পদ্ধতি অনুসরণ করে ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করেন তাহলে আপনাকে কখনো হতাশায় পড়তে হবে না। কাজ সুরু করার আগে অনেকেই ভাবেন যে, এখানে কাজ পাওয়া বেশ শক্ত। তবে সে ধারনা মোটেও ঠিক নয়। কিন্তু আপনি যদি আপনার কাজ নিয়ে পুরোপুরি দক্ষ না হোন তবে ফ্রিল্যান্সিং করাটা আপনার জন্য একটু কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।
এজন্য এখন থেকে আপনিও আপনার কাজ নিয়ে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলুন ও মন দিয়ে কাজ করুন এবং নিজেকে গড়ে তুলুন একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার রূপে। আর এভাবে কাজ করে ফ্রিল্যান্সিং জগতে হয়ে উঠুন একজন আদর্শ ফ্রিল্যান্সার। যা আপনার পরিচয় কে দেশ ও সমাজের চোখে আরো বর্ধিত করতে সহায়তা করবে।
এছাড়াও আপনাকে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার স্বাধীনতা প্রদান করে ফ্রিল্যান্সিং। সেই সাথে সাহায্য করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের সাথে পরিচিত হতে। তাই আর চিন্তা করে দেরি না করে আপনিও হয়ে যেতে পারেন একজন ফ্রিল্যান্সার।