তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ জনজীবনে শঙ্কা-উৎকণ্ঠা থাকলেও প্রকৃতি চলছে তার আপন মহিমায় রঙ ও রূপে। ফুলে-মূকুলে সেজেছে তার চিরচেনা সাজে। করোনার মধ্যে দূষণহীন শহরে উঁকি মারছে বর্ষায় নানা রঙের ফুল। মৌলভীবাজার শহরের চারপাশে, ডিভাইডারে, পয়েন্টে যেখানে চোখ যাবে দেখা মিলবে পরিবেশ যেন উজাড় হয়ে ফুটেছে ফুল। এ যেন ফুলে ফুলে সাজানো, ফুলেল শহর মৌলভীবাজার। ক্যামেলিয়া, প্লুমেরিয়া, পয়েনসেতিয়া, অশোক, জারুল, ফুরুস, পিঙ্ক ক্যাসিয়া, গোল্ডেন শাওয়ার, গার্লিক ভাইন, ক্লক ভাইন, ট্যাবেবুইয়া রজিয়া, বাউহিনিয়া ভারিয়েগাটা, লাইলাক, বকুল, রাধাচুড়া, কৃষ্ণচুড়া, টেকোমা. স্থলপদ্ম, হাস্নাহেনাসহ নানারকম দেশি-বিদেশি মৌসুমি-স্থায়ী ও স্থানীয় বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ শোভা পাচ্ছে শহরময়।
শহরটিকে দেখলে যে কেউ বলবে রূপকথায় গাঁথা। পুরো শহরটি যেন গুচ্ছ গুচ্ছ বাগান। শহরের বিভিন্ন জায়গাতেই চোখে পড়বে সারা বছর ফুটে থাকা নানান রঙের বাহারি সব ফুল। শহরের রঙিন ও নান্দনিক ফুলের বাগান সহজেই যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। ফুলেল শহর গড়ার মূল কারিগর সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী। তিনি প্রথম ৩০০ ফুলের চারা লাগিয়ে এর যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে পৌর মেয়র ফজলুর রহমান উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
কানাডা প্রবাসী নুরুর রহমান তরফদার জানান, আমাদের শহরটি বাংলাদেশের সুন্দরতম শহরগুলির একটি। মৌলভীবাজার শহরকে ফুলেল করে তোলার একটা চেষ্টা বেশ ক’বছর থেকেই চলছে, আমাদের তরুণ উদ্যমী মেয়র ইতিমধ্যেই প্রবীণাঙ্গনে দেশি বিদেশী অনেক ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। আগামীতে কোদালিছড়ার পাড় ঘেঁষে লাগানো হবে বাহারী ফুল, মনু নদ তীরে এবং বেরি লেক এলাকায় ফুল লাগানোর ইচ্ছা আছে তার। সমষ্ঠিগতভাবেও আমরা ফুল গাছ লাগিয়ে যাচ্ছি। মৌলভীবাজার কলেজ, মহিলা কলেজ, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আই হসপিটাল, ডিসি অফিস, সার্কিট হাউস, নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস, ভূমি অফিস, শহীদ মিনার সহ অনেক জায়গায় আমরা ফুল গাছ লাগিয়ে যাচ্ছি।
ফুলপ্রেমি জাহেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সকালে যখন শহরের মাঝ দিয়ে গাড়ি করে যাচ্ছিলাম বিভিন্ন সড়কে নানা জায়গায় রঙ বেরঙের ফুল মুগ্ধতা সৃষ্টি করে। করোনার এই বদ্ধ সময়ে ফুলে ফুলে সেজে থাকা ফুলেল একটা শহর অন্য রকম এক অনুভুতির সৃষ্টি করে। এ নান্দনিক উদ্যোগকে আরো পরিকল্পিতভাবে প্রসারিত করার দাবী জানাই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে।
ফুলপ্রেমি এহসানা চৌধুরী চায়না বলেন, আমার শহরে ফুলের রাজ্য আমাকে বিমোহিত করে। আমার বাসার সামনে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের একপাশে অনেক টেকোমা ফুলের সমাহার। আমি প্রতিদিন সকালে সবুজ পাতার ফাঁকে হলুদ ফুলগুলো দেখে মুগ্ধ হই। এছাড়া আমি নিজেও আমার বাসায় ফুল বাগান করেছি।
ফুলেল শহর গড়ার উদ্যোক্তাদের একজন শিক্ষাবিদ আব্দুল খালিক। তিনি বলেন, কানাডা প্রবাসী মৌলভীবাজার এর বাসিন্দা নুরুর রহমান তরফদার ফুলপ্রেমি হিসেবে পরিচিতি। তিনি নানা ধরনের দেশী-বিদেশী চারা সংগ্রহ করেছেন মানিকগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সড়কের পাশে ও বাসাবাড়িতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফুলের চারা রোপণ করেছি আমরা সম্মিলিতভাবে। শহরে ফুটবে ফুল মানুষ তার সৌন্দর্য উপভোগ করবে,এ লক্ষ্যে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী অনেকগুলো ফুলের চারা লাগিয়েছিলেন। এরপর থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে নুরুর রহমান তরফদার এর আগ্রহে পৌর মেয়র ফজলুর রহমান এর উদ্যোগে মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সড়কের পাশে আমরা কয়েকজন মিলে ফুলের চারা রোপণ করেছি। এ কাজে যুক্ত রয়েছেন চিকিৎসক ও সংস্কৃতিজন এম এ আহাদ, সংস্কৃতিজন আব্দুল মোত্তালিব রঞ্জু, কথাসাহিত্যিক আকমল হোসেন নিপুসহ এই শহরের অনেক প্রকৃতি ও ফুলপ্রেমি। শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের সিলেট রোড, শ্রীমঙ্গল রোড, কোর্ট রোড, সৈয়দ মুজতবা আলী সড়ক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাহিরে দোল খাচ্ছে নানা রঙের ফুল ও সবুজ দেবদারু গাছ সহ নানা ধরনের সৌন্দর্যবর্ধক গাছ।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান জানান, এই নান্দনিক ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন পৌর নাগরিক ও পথচারীরা। এ উদ্যোগের শুরু করেছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা, সৈয়দ মহসীন আলী। পরবর্তীতে আমরা এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার ফুল গাছ সহ নানা ধরনের গাছ লাগিয়েছি। এখন সে গাছগুলো ফুলে ফুলে রঙিন।
মেয়র আরও বলেন, অনেক চারা লাগানোর কথা ছিলো, করোনার কারনে চারা আনা যাচ্ছে না। শীঘ্রই ব্যাপক হারে শহরের আরো বিভিন্ন জায়গায় ফুল সহ সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগানো হবে। এছাড়াও ফলদ ও ওষুধি গাছ লাগানো হবে। এই কার্যক্রমে সকলের সহযোগিতা কামনা করি।