লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় এক কিশোরীর সাথে আরেক ছেলের সাথে সম্পর্ক থাকার জের ধরে কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়াডের রাহাত আলী চৌধুরী পাড়ায়। ওই কিশোরীর পরিবারকে গত মঙ্গলবার (১ জুন ) রাতে সমাজচ্যুতের সিদ্ধান্ত দেন তারা। ওই কিশোরীর বাড়ি থেকে বের হতে ও ঢুকতে পারছেন না কেউ। চাষাবাদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে। মসজিদ, মাদরাসা থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের ছেলে মেয়েদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এমনি বিপদের সময় ও কাউকে কোন সহায়তা না করার জন্য বলা হয়েছে সবাইকে। পান করার পানি পর্যন্ত অন্যগ্রাম থেকে আনতে হয় পরিবারকে।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বাবা বলেন, স্থানীয় মসজিদের খতিব ১ জুন(মঙ্গলবার) রাতে আমাকে তাওবা করায় এবং আমাকে একঘরে করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় । সমাজের সিদান্তগুলো তিনি আমাকে জানিয়ে বলেন, ‘ সরকারী রাস্তা ছাড়া গ্রামের কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। গবাদিপশু ঘরের বাইরে বাঁধা যাবে না। গ্রামের কোনো দোকানে যাওয়া যাবে না। কারও সঙ্গে মেশা যাবে না। গ্রামের সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে কেউ তোমাদের সাথে মিশতে আসবে না।’
কিশোরীর বাবা আরো জানান,আমাকে এবং আমার পরিবারকে বিভিন্ন অযুহাতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে,আমাকে মেরে পেলার হুমকি দিচ্ছে। আমার পরিবারকে ৩ বার মারতে গেছে সমাজের বিত্তশালীরা। তাই আমি লোহাগাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ও করেছি। তিনি কান্নাকাটি করে বলেন,আমি আমার পরিবার নিয়ে বাঁচতে চায়। আমাকে বাঁচতে দিন,ওরা আমাকে মেরে পেলবে।
ভুক্তভোগী ঐ কিশোরীর মা বলেন, আমার ছোট মেয়ে না বুঝে আপরাধ করেছে সে জন্য আমারা সমাজের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম।তারা ক্ষমা না করে আমাদেরকে একঘরে করে দেয়। আমার ছোট ছোট মেয়েদেরকে গ্রামের মক্তব থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমার স্বামীকে মসজিদে থেকে দিচ্ছে না। আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকে কারো সাথে মিশতে দিচ্ছে না। তারা আমার কাছে বিভিন্ন অযুহাতে টাকা দাবি করে,আমি টাকা না দেওয়ায় আমাকে ৩ বার বাড়িতে মারতে এসেছে। আমার স্বামীকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। আমাদের চাষ করার জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন আমরা কি খাব তা নিয়ে চিন্তায় আছি। এমন কি কোরবানির সময় যাতে আমাদেরকে কেউ মাংশ না দেয় সেটাও সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে।
রাহাত আলী চৌধুরী পাড়া মসজিদের খতিব ও মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আকবর আলী জনান,সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ খাইর আহমেদকে সমাজচ্যুত করে। খাইর আমহদ সমাজের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে তওবা করে।
নবী হোসেন কোম্পানি নামের সমাজের এক ব্যক্তি জানান, খাইর আহমদ সমাজের মানুষের সাথে অসদাচরণ করেছে এবং সে ও স্ত্রী খুব খারাপ লোক তাই সবাই মিলে তাকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। যদি খাইর আহমদ সমাজের কাছে ক্ষমা চায় তাহলে তাকে আবার সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এস.এম ইউনুচ বলেন,স্থানীয় সেইফুল নামে এক ব্যক্তি ঐ পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি শুনেছি এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেই। তবে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি আমার জানা নাই।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসেন মাহমুদ বলেন,জিডির বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব জিতু বলেন, বিষয়টি অমানবিক। ভুক্তভোগী পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে এখনই নির্দেশ দেওয়া হবে। খোজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।