১৯৭৪-৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে ভাবনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বয়স তখন ৫৫ বছর। শারিরিকভাবেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন যথেষ্ঠ সবল। ৭৫ সালে দেশীয় শত্রুদের হাতে নিহত না হলে বঙ্গবন্ধু দেশকে লক্ষ্যে পৌছে দিতেন। বঙ্গবন্ধু মত হতে পারবেনা কেউ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি নেতৃত্বও গড়ে উঠেনি। শুন্যতাটি ধরা পরেছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর। জাতীয় চার নেতা জেল খানায় নিহত হওয়ার ফলে আওয়ামী লীগের তৃতীয় সারির নেতারা নেতৃত্ব পান। সেই নেতৃত্ব দলকে সংগঠিত করে ধরে রাখতে পারেনি। কোন্দলের কারনে বিভক্ত হয়ে পরেছে দল। ক্ষমতার লোভে সটকে পরেছে অনেকে। ৭৯ এর নির্বাচনে দলনেতাও নেতৃত্ব দিতে পারেননি জাতীয় সংসদে। ৬ বছর পর নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা হাল ধরেছেন দলের। বাবার মতোই দৃঢ় চিত্তে জনগনের কাছে গেছেন। দল গুছিয়েছেন জনগনকে সাথে নিয়ে। এখন যদি দেশে কোন সৎ, নির্ভিক এবং যোগ্য নেতা নির্বাচন করতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নামটিই উচ্চারিত হবে সবার মূখে। ভিন্ন দল আর মতের বিশ্বাসীরও অমত করবেনা যোক্তিক কারনে। দীর্ঘ দিনের রাজনীতিতে জননেত্রী খেতাব ছাড়াও শেখ হাসিনা যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েছেন বার বার। এখন শেখ হাসিনাই দলের একমাত্র কান্ডারি। কোন বিকল্প নেতৃত্ব তৈয়ার হয়নি দলে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখন বয়স হয়েছে। আর কতদিন কার্যক্ষম থাকবেন বিধাতাই জানেন। দলের কোন নেতা এখনো নেতৃত্বের যোগ্যতাটি অর্জন করতে পারেনি। সবার কাছে গ্রহনযোগ্য নেতা বেড় হয়ে আসেতে পারেনি দলে। তাহলে শেখ হাসিনা পরবর্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিটি কেমন হবে?
ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। কংগ্রেসই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে বেশী সময়। সেই কংগ্রেস এখন সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদাটিও রক্ষা করতে পারেনা। ইন্দ্রাগান্ধীর বিকল্প মনে করা হত তার ছোট ছেলে সঞ্জয়কে। সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাবার পর বড় ছেলে রাজীব গান্ধীকে রাজনীতিতে টেনে এনেছেন ইন্দ্রাগান্ধী। আততায়ীর গুলিতে ইন্দ্রাগান্ধী নিহত হবার পর রাজীব গান্ধী মায়ের স্থান পুরন করে সফল হয়েছিলেন। অনেক সমালোচনার জন্ম দিলেও রাজীব রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছিলেন। নির্বাচনী প্রচারনাকালে বোমা হামলায় রাজীবের মৃত্যু হলে গান্ধী পরিবার রাজনীতি থেকে সরে পরে। অবশেষে দলের স্বার্থে রাজীবের বিধবা পত্নী ইটালীয় বংশভুত সোনিয়া গান্ধী দলে টেনে আনে নেতা কর্মীরা। সোনিয়া গান্ধী দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি বংশ পরিচয়ের কারনে। অনাভিজ্ঞ রাহুল গান্ধী দলের নেতৃত্ব নিয়ে গান্ধী পরিবারের নাম নিশানা মুছে দিয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের সকল অর্জন দাবী করলেও ভুল হবেনা। জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভিন্ন অবস্থানে নিয়ে গেছেন। অগনতান্ত্রিক সামরিক শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে উন্নয়নের পথ দেখিয়েছেন। বিশ্বব্যংক কে চ্যলেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা দেতু নির্মান করে ফেলেছেন। কর্নফুলি নদীর তলদেশে টানেল নির্মান সহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যপক উন্নয়ন করেছেন। আকাশে স্যটেলাইট নিক্ষেপন করে বিশ্বয় দেখিয়েছেন। খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্নতা এনে দেশকে অর্থনৈতিক সাফল্য এনে দিয়েছেন। জাতীয় রিজার্ভ এখন সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। উৎপাদন এবং রপ্তানী ভারতকে ছুয়ে ফেলেছে। জিডিপি এখন এই করোনার মধ্যেও রেকর্ড পরিমান। শেখ হাসিনার কিছু হলে দেশের অবস্থাটি কি ধরে রাখতে পারবে আওয়ামী লীগ। এমন নেতা কি আছে দেশে?
আজিজুর রহমান প্রিন্স,
কলামিস্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ।