একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গোছানোর কাজে হাত দিয়েছে জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে এবার নতুন কমিটি হতে যাচ্ছে অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের। মূলত ১৯৯৮ সালের ১৬ মের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কাউন্সিল হয়নি কৃষক দলের।
১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। সেই সময় বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। এরপর বিএনপির সাবেক মহাসচিব (পরে বহিষ্কৃত) আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে সভাপতি করে ১৯৯২ সালে কৃষক দলের কমিটি গঠন করা হয়। তখন সাধারণ সম্পাদক করা হয় শামসুজ্জামান দুদুকে। তিনি এখনও স্বপদে বহাল আছেন।
এরপর ১৯৯৮ সালের সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবুল আলম তারাকে সভাপতি ও শামসুজ্জামান দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করে ফের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর কেটে গেল ২০ বছর, কিন্তু কোনো নতুন কমিটি পায়নি কৃষক দলের নেতাকর্মীরা। ফলে অনেকটা নেতাকর্মীহীন হয়ে পড়েছে বিএনপির এই অঙ্গ সংগঠন।
কৃষক দলের সর্বশেষ কাউন্সিল ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির দপ্তর সম্পাদক শেখ সাদী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে আহ্বায়ক করে কৃষক দলের কমিটি গঠন করেন। এরপর জিয়াউর রহমান মারা গেলে আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এর মাঝে কেটে যায় দীর্ঘ বছর। কিন্তু ১৯৯২ সালের কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত আর কোনো কমিটি হয়নি কৃষক দলের।
১৯৯২ সালে সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে সভাপতি ও শামসুজ্জামান দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি করা হয়। তখন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি করা হয় মজিবুর রহমান মোল্লাকে, যিনি পরবর্তী সময়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ওই কমিটির সহসভাপতি ছিলেন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তরিকুল ইসলাম।
এরপর ১৯৯৮ সালের ১৬ মে সর্বশেষ কৃষক দলের জাতীয় কাউন্সিলে মাহবুবুল আলম তারাকে সভাপতি ও শামসুজ্জামান দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর ১০ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মাহবুবুল আলম তারা।
এরপর সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মজিবুর রহমান মোল্লা ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে তিনি মারা গেলে সংগঠনের দ্বিতীয় সহসভাপতি ও সেই সময়ের বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।
মির্জা ফখরুলও টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল বিএনপির মহাসচিব হলে তিনি কৃষক দলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত কৃষক দলের সভাপতির পদ খালি আছে। তবে ২৭ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল আছেন শামসুজ্জামান দুদু।
কৃষক দলের দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া এবং আগামী কমিটি কবে হতে পারে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ সপ্তাহের মাঝেই আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। এরপর সারা দেশে কাউন্সিলের মাধমে জেলা-উপজেলার কমিটি করা হবে। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি করা হবে। এ জন্য তিন থেকে চার মাস সময় লাগতে পারে।
দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ার ব্যাপারে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গত ১২ বছর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে প্রতিকূল অবস্থায় আছে। এ সময়ে সরকারের দমন-পীড়নের কারণে আর কাউন্সিল করার সুযোগ হয়নি। তা ছাড়া ২০১৬ সালের শেষের দিকে কাউন্সিলের উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
দপ্তর সম্পাদক শেখ সাদী এনটিভি অনলাইনকে আরো বলেন, ‘আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কৃষক দলের কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, তিন-চার দিনের মধ্যে একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হবে।’ আহ্বায়ক কমিটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করছি, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুকে আহ্বায়ক করেই কমিটি গঠন করা হবে। এরপরও বাকিটা বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত।’
শেখ সাদী আরো বলেন, কৃষক দলের শীর্ষ পদ থেকে বিএনপির বেশ কয়েকজন মহাসচিব হয়েছেন। এমনকি রাষ্ট্রপতিও হয়েছেন। তাই সভাপতি পদটি অনেকের কাছে ‘ম্যাজিক্যাল চেয়ার’। বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, সাবেক মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও আবদুল মান্নান ভূঁইয়াও কৃষক দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই জ্যেষ্ঠ অেনেকের নাম শোনা যাচ্ছে পদপ্রত্যাশী হিসেবে।
সূত্র : এন টি ভি