মনসুর আলম অন্তর, কুবিঃ করোনার অভিঘাতে গেলবছরের মার্চে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকার ঘোষিত নির্দেশনা মোতাবেক বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ছুটিতে রয়েছে, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই।কিন্তু ফাঁকা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রক্ষীদের মেলেনি ছুটি। করোনাকালীন তারা পায়নি কোন স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী।
খোজঁ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেলে বন্ধ হয়ে যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই বাড়ি ফিরে যাওয়ায় জনমানবশূন্য ক্যাম্পাসে দেখা দেয় নিরাপত্তাহীনতা। তাই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩১ জন সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্থ নিরাপত্তা প্রহরী ২৩ জন নিরাপত্তাকর্মীর ছুটি মেলেনি।
জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলেও তারা পায়নি কোন নিরাপত্তা সুরক্ষা সামগ্রী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরুতে মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড সেনিটাইজার দেওয়ার কথা থাকলেও এক বছরেও পায়নি করোনা সুরক্ষা সামগ্রী। এসময়ে অনেকে ওভার টাইম দায়িত্ব পালন করলেও মেলেনা ওভার টাইম ভাতা। এছাড়া পুরো ১ বছর করোনাকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করলেও আনসার সদস্যরা পায়নি ঝুকিঁভাতা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে। তারা বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধের সাথে সাথে সবাই বাড়ি ফিরলেও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকায় তা আমরা যেতে পারিনি। আমরা ছোট চাকুরি করতে পারি, কিন্তু দায়িত্ব অনেক বড়। আপনারা চলে গেলেও আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু গত এক বছরের অধিক সময় ধরে করোনায় জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে কাজ করছি আমরা। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের জীবনের সুরক্ষার জন্য মাস্ক, গ্লাভসের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেনি। আমরা অল্প বেতনের চাকরি করি। প্রতিদিন এগুলা কিনা ব্যবহার করা তো সম্ভব হয়না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথমদিকের লকডাউনে সুরক্ষা সামগ্রী দেয়ার কথা বলেছিল অথচ তা আমরা এখনো পায়নি। এবিষয়ে কেউ কখনো কথাও বলেনি আমাদের সাথে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য বলেন, শুরুতে মাস্ক, স্যানিটাইজার দেয়া হয়েছিল। পরে আর দেওয়া হয়নি। আমরা নিজেরা মাস্ক কিনে ব্যবহার করি।
বিশ্ববিদ্যালয় আনসার প্লাটুনের কমান্ডার আজিজুর রহমান বলেন, পূর্বে এগুলো দেওয়া হয়েছে কিনা জানিনা। তবে আমি আসার পরে দেওয়া হয়নি। তবে গতকাল একটা সভা হয়েছে নিরাপত্তা শাখার স্যারের সাথে, সেখানে সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার জন্য সিকিউরিটি অফিসারেরা প্রশাসনকে বলছে। তবে কোনকিছু দেওয়া হয় নাই, দিবে বলে কোন আশ্বাসও দেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আমি যতটুকু জানি নিরাপত্তা প্রহরীদের সেরকম কিছু দেওয়া হয়নি। শুরু থেকে দিবে বলছিল তবে দেয়নি। আমাদের পরিষদ থেকে আবেদন করব আবার।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, নিরাপত্তাকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী একেবারে দিয়নি বললে ভুল হবে। আমরা এক দুই বার দিয়েছে, তবে সেটা নিয়মিত দিতে পারি নি। আমরা নতুনভাবে আবার মাস্ক, স্যানিটাইজার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওভার টাইম করার পরও কেন প্রহরীরা ওভার টাইম ভাতা পাচ্ছেনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওভারটাইম নিয়ে একটু সমস্যা আছে। এখন ঘন্টা অনুপাতে টাকা দেওয়া হবে। যেহেতু আগের নিয়মে পেমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছেনা, তাই একটু দেরি হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আবেদন করা আছে, প্রশাসন অনুমোধন করলে তারা একসাথে টাকা নিতে পারবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, সিকিউরিটি অফিসার কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী কিনে দিতে, তবে তারা তা কিনেছেন কিনা নিশ্চিত নয়। নিরাপত্তা যেহেতু জরুরি সেবার মধ্যে একটি অবশ্যই তাদের মাস্ক, স্যানিটাইজার প্রয়োজন। ওভার টাইমের টাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে নিয়মবহির্ভূত ভাবে বেসিক হিসাবে ওভারটাইম দেয়া হতো, কিন্তু ইউজিসি সহ বেশীর ভাগ অফিস ঘন্টা হিসাবে দেওয়া হবে। তারা দাবি জানিয়েছে সে বিষয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।