একেএম কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ পরিকল্পিত একটি কার্লভার্ট নির্মিত হলে নওগাঁ সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়নের কমপক্ষে ২৪টি গ্রামের ২০ হাজার বিঘা জমির ফসল উৎপাদন নির্বিঘ্ন হবে। সেই প্রয়োজনীয়তার আলোকে ত্রান ও পুনর্বাসন বিভাগ থেকে একটি কার্লভার্ট মঞ্জুর করা হয়। অথচ কার্লভার্টটি নির্মানের স্থান অন্য উপজেলায় হওয়ার কারনে সেখানকার এক ইউপি মেম্বারের মত পার্থক্যের কারনে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়নের আবাদপুর, ডাফাইল, মোহনপুর, কাশিবাড়ি, দশপাইকা, নারচি, উল্লাসপুর, কুমুড়িয়া, চত জাফরাবাদ, ভবানীগাঁথী, মশরপুর, চন্ডিক্ষেত্র, কুষাডাঙ্গা, শতপুর, চকবিক্রমসহ প্রায় ২৪টি গ্রামের আওতায় ছোট বড় ৫টি বিল বা মাঠ রয়েছে। এসব হচ্ছে কানছগাড়ি, বড়বিল, পাটগাড়ি, কন্দরগাড়ি এবং ঠাকুরবাড়ি বিল।
হাপানিয়া ইউপি সদস্য মোঃ রিয়াজ উদ্দিন, কাশিবাড়ি গ্রামের সাইদুল ইসলাম, আবাদপুর গ্রামের আছির উদ্দিন পিন্টু ও গোলঅম মোস্তফা, একডালা গ্রামের শাহিন, মখরপুর গ্রামের হযরত আলী, মোঃ এরশাদ আলী, মজিবর রহমান, আইয়ুব হোসেন ও আলহাজ্ব সাহেব উদ্দিন সরদার বলেছেন এসব বিল বা মাঠে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার বিঘা জমি। এই বিলগুলোর পানি হাপানিয়া-দুলবহাটি সড়কের লাখদহ ব্রীজ দিয়ে নিষ্কাসিত হয়ে দক্ষিনে প্রবাহিত হয়। কিন্তু মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নে পাতনা মৌজার সাথে রয়েছে একটি সড়ক যা এসব পানি নিষ্কাশনের বাধাস্বরুপ। এখানে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় প্রতি বছর এই ২০ হাজার বিঘা জমির উঠতি ধান ডুবে যায়। এতে কৃষকরা সর্বশান্ত হয়ে পড়েন। সেই আলোকে ত্রান ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর ঐ সড়কে একটি মহাদেবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে একটি কার্লভার্ট নির্মানের পরিকল্পনা হাতে নেয় এবং তা মঞ্জরও হয়। এই কার্লভার্ট দিয়ে এসব পানি নিষ্কাশিত হয়ে বিল মনসুর নামক এক বিশাল জলাশয়ে পড়লে হাপানিয়া ইউনিয়নের ২০ হাজার বিঘা জমির ধান নিরাপদ হবে।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে কার্লভার্ট নির্মানের স্তান নির্ধারন নিয়ে। হাপানিয়া ইউনিয়নের ভুক্তভোগি সাধারন মানুষ দাবী করেছেন পাতনা মৌজায় আন্দির পুকুরের পশ্চিম পার্শ্বে তিনমাথা থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬শ ফিট উত্তরে ৪২ ফিট দৈর্ঘ্য একটি কার্লভার্ট নির্মান করা হোক। কিন্তু ভীমপুর ইউনিয়নের পাতনা গ্রামের ইউপি সদস্য জনৈক সুজন আলী ঐ স্থান থেকে দক্ষিনে তিনমাথায় কার্লভার্ট নির্মানের পক্ষে অনড় রয়েছেন। ভুক্তভোগীদের দাবী ঐ তিনমাথায় কার্লভার্ট হলে কোন লাভ হবে না। একটি সরু নালঅ দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হতে পুনরায় বাধার সৃষ্টি হবে। কারন ঐ নালাটির দু’পার্শ্বে ইতিমধ্যেই পুকুর কেটে নালাটি প্রায় বন্ধ করে ফেলেছে। এই নালার মুখে কার্লভার্ট নির্মান করা হলে তার দৈর্ঘ্য হবে মাত্র ২৪ ফিট। অথচ লাখদঞ্চ ব্রীজের দৈর্ঘ্য ৩৮ ফিট। লাখদহ ব্রীজের পর রয়েছে আরও দু’টি বিল বা মাঠ। কাজেই এক বিপুল পরিমান পানি মাত্র ২৪ ফিট একটি কার্লভার্ট দিয়ে দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারবেনা। ফলে যে সংকট সেই সংকটই থেকে যাবে। উত্তর দিকে হাপানিয়া ইউনিয়নবাসীর কাঙ্খিত স্থানে নির্মিত হলে সরাসরি পানি সহজেই দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারবে একং তারা তাদের জমির ধান রক্ষা করতে পারবেন।
উল্লেখ্য এই কার্লাভার্ট-এর সুফল একমাত্র সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়নের কৃষকরাই উপভোগ করবেন। মহাদেবপুর উপজেলার বাসিন্দাদের লাভ বা ক্ষতি কিছুই নাই।
ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ ভদ্র বলেছেন সেখানে এরকটি কার্লভার্ট নির্মান হওয়া দরকার। তবে টেকনিক্যাল ভাবে তদন্ত করে যৌক্তিক স্থানে নির্মান করা হলে তাঁর কোন আপত্তি নেই।
মহাদেবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুলতান হোসেন জানিয়েছেন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তার তাগিদে সেখানে ত্রান বিভাগ থেকে সেখাানে একটি কার্রভার্ট নির্মান অনুমোদদ দেয়া হয়েছে। এখন স।থান নির্ধারন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে তিনি মনে করেন সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়ন বাসীর কাঙ্খিত স্থানে কার্লভার্ট নির্মান যৌক্তিক এবং অধিক ফলপ্রাসূ। এ ব্যপারে একটি টেকনিক্যাল কমিটি তৈরী করা হয়েছে। এই কমিটির রিপোর্ট এলে কার্লভার্ট নির্মানের কাজ শুরু করা হবে। এ নিয়ে যদি বেশী জটিলতা সৃষ্টি হয় তাহলে সেটি নির্মান করাই অসম্ভব হয়ে পড়বে।