শাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, দেবিদ্বার, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ১৭ মার্চ বুধবার উপজেলা প্রাঙ্গণ হইতে বিশাল র্যালি নিয়ে সড়কপথে দেবিদ্বার নিউমার্কেটের সম্প্রসারিত সড়কের শুভ উদ্বোধন শেষে উপজেলায় বঙ্গবন্ধু’র ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া, কেক কেটে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ের কুইজ প্রতিযোগিতায়য় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করে জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কুমিল্লা -০৪ আসন এর সংসদসদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এর নেতৃত্বে উপজেলা উপজেলা নির্বাহি অফিসার রাকিব হাসান, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাশেম ওমানি, সহকারী কমিশনার ভূমি গিয়াস উদ্দিন, অফিসার ইনচার্জ ওসি আরিফুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য শিরিন সুলতানা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমা বেগমসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মাস্টার, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মো. ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক জিএস মান্নান মোল্লা, কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মো. সাদ্দাম হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম শামীম,উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন রুবেল, বিভিন্নন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান, দেবিদ্বার উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান সহ অঙ্গ সংগঠনের সকল নেতাকর্মীগন।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা শেখ সায়েরা খাতুন। লুৎফর-সায়েরা দম্পতির এ সন্তানই পরে এদেশের মানুষের মুক্তির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মতো রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। এ নেতাদের সাহচার্যে তিনি নিজেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর পরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে অগ্রসর হন বঙ্গবন্ধু। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক পদ পান। পরে অ-সাম্প্রদায়িক চেতনায় আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ।
বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাঙালির অধিকার আদায়ে এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাগারেও যেতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পান। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা শেখ মুজিবুর রহমানকে কারামুক্ত করে। এ সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানা চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন নি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্তপর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন।
এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে প্লাবিত ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ই মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু বেশিদিন দেশ গঠনের কাজ করে যেতে পারেননি। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে স্ব-পরিবারে নিহত হন। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান ঘটে।