মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার চান্দিনায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে পৌর নির্বাচনকে ঘিরে।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৬ জানুয়ারী দ্বিতীয় ধাপে এই পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।তবে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীদের মধ্যে কোন্দল,পরস্পর বিরোধী বক্তব্য,আচারণবিধি লংঘন,প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উত্তাপ বাড়াচ্ছে চান্দিনায়।
এদিকে শান্তিপূর্ণ,সুষ্ঠু,অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন চান্দিনার পৌরবাসীকে উপহার দিতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন।যে কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচারণবিধি লংঘনের অভিযোগ উঠলে দল নয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন প্রশাসন।ইতোমধ্যে কয়েকটি ছোটখাটো আচারণবিধি লংঘন করায় কোন প্রার্থীকে ছাড় দেননি প্রশাসন।
এদিকে ভোটারদের প্রত্যাশা নিরাপদ ও ভয়-ভীতিহীন পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে যাতে ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ তৈরির আহবান জানান প্রশাসনের প্রতি।জনগনের ভাগ্য উন্নয়নে যিনি কাজ করবেন তাকেই ভোট দিবেন পৌর ৭নং ওয়ার্ডের খলিলুর রহমান নামে ভোটার। আবদুল হক নামে আরও এক ভোটার জানান,তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান।যাতে নিরাপদ পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।
এদিকে চান্দিনা পৌর নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য মেয়র ও কাউন্সিলরসহ সকল প্রার্থীর একই কথা হলেও মাঠ পর্যায়ে দেখাগেছে ভিন্নতা।সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করার কথাটুকু যিনি সবচেয়ে বেশি বলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন ভূঁইয়া।তার সমর্থকদের বিরুদ্ধেই প্রচার-প্রচারণায় বাধা প্রদান,পোস্টার,ব্যানার ও লিফলেট ছিড়ে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র জগ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী শামীম হোসেন।
তিনি বলেন,নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা আমার কর্মী সমর্থকদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা না চালানোর জন্য।৮ জানুয়ারীর পর আমাকে ও আমার সমর্থকদেরকে হামলা ও মামলা দেওয়ার ভয়-ভীতি দিয়ে যাচ্ছেন।পুলিশ ধারা হয়রানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,এতো অভিযোগের পরও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে কোন মনিটরিংয়ে নামছে না।প্রশাসনের প্রতি আমার দাবি ভোটারদের ভোটে যে নির্বাচিত হোক আমার আপত্তি থাকবে না।তবে ভোটাররা যেন ভয়-ভীতিহীন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করেন।
অভিযোগে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শওকত হোসেন ভূঁইয়া বলেন,আমার সমর্থকদের বিরুদ্ধে জগ প্রতীকের প্রার্থীকের তোলা সকল অভিযোগ মিথ্যা।নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রশাসনকে অনুরোধ করে আসছি চান্দিনায় পৌরসভায় একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য।অন্যদিকে বিএনপির ধানের শীর্ষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর অভিযোগে পৌর নির্বাচনে পরিবেশে এখনও লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই।পরিবশে সুষ্ঠু রাখতে প্রশাসনের প্রতি আহবার তার।
এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়,পৌর নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের দিন ৭নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে ৭ জন্য আহত হয়।এসময় এক প্রার্থীর প্রচারনার কাজে ব্যবহৃত সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মাইক ভাংচুর করে প্রতিপক্ষে সমর্থকরা।ঘটনার সূত্রে জানা যায়,নির্বাচনে পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস ছালাম(উট পাখি প্রতীক)মনোয়নপত্র জমা দেন।
এসময় পৌর আওয়ামী লীগ ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আলী হোসেনও (ডালিম প্রতীক) প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দেন।২৮ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগ ৭নং ওয়ার্ড থেকে আব্দুস ছালামকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়।বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যহারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।৩০ ডিসেম্বর প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর তাদের সমর্থকরা এলাকার মিছিল দেয়।মিছিলে আব্দুস ছালামের সমর্থকরা আলী হোসেনে প্রচারণার হামলা চালিয়ে তার সমর্থকদের আহত করার অভিযোগ তুলেই প্রার্থী নিজেই।
ডালিম প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আলী হোসেন আরও অভিযোগ করেন,তিনি তার ওয়ার্ডে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না প্রতিপক্ষ আব্দুস ছালামের সমর্থকের হুমকি ও হামলার ভয়ে।প্রশাসনের কাছে তার দাবি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে উট প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুস ছালাম বলেন,প্রতীক বরাদ্দের দিন সামান্য একটি উস্কানিমূলক ভাষা ব্যবহার নিয়ে আমার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।ডালিম প্রতীকের প্রার্থীর সাথে আমার কোন দ্বন্দ্ব নেই।আমার সমর্থকদের বিরুদ্ধে তোমলা হুমকি ও হামলার অভিযোগ মিথ্যা।
নির্বাচনের আমেজ,উত্তাপ ও পরিবেশ নিয়ে চান্দিনা উপজেলা নির্বাচন মোঃ আহসান হাবীব বলেন, নির্বাচনের মাঠে আচারণবিধি ঠিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।তবে ছোট খাটো কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।আচারণবিধি লংঘনে আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।নির্বাচন সুষ্ঠু রাখতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।