ডেস্ক রিপোর্টঃ ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে চালের বাজার। শুধু তাই নয় নতুন বছরের শুরুতেই মুরগি, এলাচ, মসুর ডাল, জিরা, আদা, দারুচিনি, দেশি এবং আমদানি দুই ধরণের পণ্যের দাম বেড়েছে। আর খুচরা ও পাইকারি বাজারে সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। তবে কমেছে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম।
এই দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। কারণ এমনিতেই করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে। এরমধ্যে নিত্যপণ্যের চড়া দামের কারণে খেটে খাওয়া মানুষেরা বাজারে আসতেও ভয় পাচ্ছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরের চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চাল সর্বোচ্চ ৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এমন অস্বাভাবিক দামে সাধারণ ক্রেতাসহ স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
এদিকে ভারত থেকে চালের আমদানিতে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তে দিনাজপুরে হঠাৎ ধানের দাম কমতে শুরু করেছে। বাজারে বস্তা প্রতি ধানের দাম কমেছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে কমেনি চালের দাম।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হলো সরকারের কাছে এখন যথেষ্ট স্টক নেই। সে জন্য সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ইতোমধ্যে ৫০ হাজার মেট্রিক টন করে চাল আমদানির তিনটি এলসি ওপেন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আরো দুটি এলসি খোলা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, বেসরকারি খাতেও চাল আমদানির সুযোগ দেয়া হয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্য রাখতে ৬২ শতাংশ যে ট্যাক্স ছিলো, সেটা কমিয়ে ২৫ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে। নতুন যারা ব্যবসায়ী তাদের লাইসেন্স না থাকলে একদিনের মধ্যে তাদের লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, গত বছরের শেষের দিকে প্রতি লিটার বোতলজাত ভোজ্য তেল যেখানে ছিল ১০০ টাকার মধ্যে। এখন তা দাঁড়িয়েছে ১১৫-১২০ টাকা পর্যন্ত। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও এ তথ্য উঠে এসেছে।
টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহে ব্যবধানে লুজ সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে বেড়েছে এক টাকা। আর মাসের হিসেবে বেড়েছে ৬ টাকা বা ৬.৩৪ শতাংশ। বর্তমানে প্রতি লিটার ১০৮ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক বছরে বেড়েছে ১৮.৪৮ শতাংশ। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ০.৯০ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ থেকে ৫৮০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৮.৭৪ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৩.৭১ শতাংশ। এ ছাড়া বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২.৫ শতাংশ বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এক লিটারে বেড়েছে ৫ টাকা। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৮.৭১ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৯.০৫ শতাংশ। এক লিটার লুজ পাম অয়েলের দাম ২.১৩ শতাংশ বেড়ে ৯৫ থেকে ৯৭ টাকা হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৪.৯২ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৮.৫২ শতাংশ। আর এক লিটার সুপার পাম অয়েলের দাম ৩.০৯ শতাংশ বেড়ে হচ্ছে ৯৮ থেকে ১০২ টাকা।
এদিকে রাজধানীর সুপার শপগুলোতে খুচরা বাজারের চেয়ে আরো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল।
দেশের শীর্ষ সুপার শপগুলোর সয়াবিন তেলের দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বপ্ন সুপার শপে ফ্রেস ব্র্যান্ডের প্রতি ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬১৫ টাকায়। একই পরিমাণ রূপচাদা ব্র্যান্ডের দাম রাখা হচ্ছে ৬৩৫ টাকা। সাফোলা ব্র্যান্ডের (৫ লিটার) দাম রাখা হচ্ছে ১১৫০ টাকা। বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের দাম রাখা হচ্ছে ৬৩০ টাকা। আর স্বপ্নের নিজস্ব ব্র্যান্ডের (৫ লিটার) দাম রাখা হচ্ছে ৫৮০ টাকা। এ ছাড়া ২ লিটার বোতল তীর ব্র্যান্ডের ২৫২ টাকা, রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ২৩৪ টাকা ও বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। এদিকে মিনা বাজারে ৫ লিটার বোতলের দাম রাখা হচ্ছে (বসুন্ধরা) ৬২৫ টাকা। অন্যদিকে আগোরায় ৫ লিটার ফ্রেস ও তীর ব্র্যান্ডের দাম রাখা হচ্ছে ৫৮০ টাকা। তবে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের (৫ লিটার) দাম রাখা হচ্ছে ৫৯৫ টাকা।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দশকের মধ্যে দেশের বাজারে সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হয়েছে ভোজ্য তেল। ২০০৮ সালে বৈশ্বিক দর বৃদ্ধিজনিত কারণে দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের (সয়াবিন) মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) দাম সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সর্বশেষ ডিসেম্বরের শেষ দিকে সয়াবিনের পাইকারি দাম মণপ্রতি ৪ হাজার ২৩০ থেকে ৪ হাজার ২৪০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।