সাহিত্য ডেস্কঃ বাংলা সাহিত্যজগতে ‘সব্যসাচী’ লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি তার দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে কবিতা, গল্প, উপন্যাস নাটকসহ শিল্প-সাহিত্যের নানা অঙ্গনে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকায় এবং পৈতৃক নিবাস কুড়িগ্রামে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯৩৫ সালের আজকের দিনে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আট ভাইবোনের মধ্যে শামসুল হক ছিলেন সবার বড়। তিনি স্কুলজীবন শেষ করেন কুড়িগ্রামে। এরপর ১৯৫১ সালে মুম্বাইয়ে গিয়ে কিছুদিন একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থায় কাজ করেন।
পরবর্তী সময়ে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে পড়ালেখা শেষে পুরোদমে লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে, ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায়। সেখানে ‘উদয়াস্ত’ নামে তার একটি গল্প ছাপা হয়। এরপর সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে তার প্রতিভার স্বাক্ষর পাওয়া যায়।
জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ‘বাসিত জীবন : সৈয়দ হকের সঙ্গে শেষ দিনগুলো’ শীর্ষক স্মৃতিচারণামূলক বই। এটি লিখেছেন কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক।
এছাড়া প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য প্রকাশ করছে সৈয়দ শামসুল হকের প্রিয় ৫০ প্রেমের কবিতা। চিত্র প্রকাশনী প্রকাশ করছে সৈয়দ শামসুল হকের শিশুতোষ গ্রন্থ ‘ভয় করলেই ভয়’।
সকাল ১০টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ চত্বরে লেখকের সমাধিস্থলে সমবেত হন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তারপর একে একে লেখকের সমাধিতে জেলা প্রশাসন, সরকারি কলেজ, জেলা আইনজীবী সমিতি, আইন কলেজ, জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতি, উত্তরবঙ্গ জাদুঘর, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এরপর এখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মীর্জা নাসির উদ্দিন, উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব নীলু। এ সময় প্রয়াত লেখকের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট সৈয়দ আজিজুল হক উপস্থিত ছিলেন।
পরে লেখকের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নুর বকত।
উল্লেখ্য,সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হন সৈয়দ শামসুল হক। ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৯ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে একুশে পদকসহ আরো অনেক পুরস্কার পান। এরপর ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী মরদেহ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ চত্বরে সমাহিত করা হয়।