ডেস্ক রিপোর্টঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। আগামী পাঁচ বছরে ১ কোটি ১৯ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি, ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ বিনিয়োগ ও সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রাখা হয়েছে এই পরিকল্পনায়।
গতকাল বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া উত্থাপন করা হয়। সার্বিকভাবে এই পরিকল্পনা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সম্মতিতেই এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) পরবর্তী বৈঠকে (২৯ ডিসেম্বর) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
পাঁচ বছরের জন্য এই পরিকল্পনায় অর্থনীতি ও সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক দিকগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কর্মসংস্থান বাড়ানো, জিডিপি প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতি ধরে রেখে বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে কমিয়ে আনা এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানোর দিকে।
৫ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে
৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়নের শেষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
৫ বছরে ১ কোটি ১৯ লাখ কর্মসংস্থান সৃজন
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরে নতুন এক কোটি ১৯ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ৮৪ লাখ ২০ হাজার এবং প্রবাসে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে। তবে কর্মসংস্থানের এই লক্ষ্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় ১০ লাখ কম।
জিইডির প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২ লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে যার মধ্যে দেশীয় ১৫ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসে ৭ লাখ।
২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ১৬ লাখ ২০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ মিলিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি হবে ২৩ লাখ ২০ হাজার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৮০ হাজার— দেশীয় ১৬ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই লক্ষ্য কিছুটা কম ২১ লাখ ২০ হাজার— দেশীয় ১৪ লাখ ২০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ।
আর পরিকল্পনার শেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশীয় ১৮ লাখ ১০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ মিলিয়ে মোট কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ১০ হাজার।
বিনিয়োগ বেড়ে হবে জিডিপি’র ৩৭%
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ বছরে বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে অর্থবছরভিত্তিক লক্ষ্য হচ্ছে— চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জিডিপির ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ ও ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ আসবে বিনিয়োগ থেকে।
৫ বছরে মূল্যস্ফীতি নামবে ৫ শতাংশের নিচে
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পাঁচ বছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হয়েছে এই পরিকল্পনায়।
প্রসঙ্গত, ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে মোট পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা থাকছে ৪টি। ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হচ্ছে এর প্রথম। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এবং সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুসরণ করা হবে। বাংলাদেশ ইতেমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করেছে এবং স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে প্রাথমিক উত্তরণের ভিত্তি স্থাপন করেছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ২০২৪ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হবে।