বিজয়ের মাসে কোটি বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে আজ সম্পুর্ন দৃশ্যমান। সেতুর ৪১তম শেষ স্প্যানটি ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারে বসানো হয়েছে। এ স্প্যান বসার মধ্য দিয়েই দৃশ্যমান হলো মূল কাঠামোর ৬.১৫ কিলোমিটার। স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো বাংলাদেশের কোটি মানুষের।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) ১২.২ মিনিটে শেষ স্প্যানটি সেতুতে বসানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্প্যান বসাতে দুই দিন সময় নেয়া হয়। সেই অনুযায়ী সেতুর শেষ স্প্যান আজ বসানো হয়েছে। আজ কুয়াশা থাকার পরেও স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়েছে। শেষ স্প্যানটির বসানোর পর দৃশ্যমান হলো ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
উল্লেখ্য, সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো হয়। ধীরে ধীরে সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। গত ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ দশমিক ০২ কোটি টাকা অর্থাৎ ৭৯ দশমিক ৮৯ ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ ভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার শেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মানুষের সপ্নপুরন হল।
এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি ফিরিয়ে নিলেও আটকাতে পারেনি পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসিকতা ঘোষণাটি আজ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে চারপাশের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নের উদ্যোগ চলছে।
প্রসঙ্গত, সেতুর নকশা করেছে আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর মূল সেতুর নির্মাণকাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি (সিএমবিইসি)।
নদী শাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সেতু ও নদী শাসনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে।
মাওয়া ও জাজিরায় পদ্মার উভয় তীরে সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ যৌথভাবে করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচসিএম।
সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার পরামর্শক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন।