পাকিস্তানের পর এখন ভারতেও আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশ এত এগিয়ে গেল কিভাবে! যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশে কিছুই ছিলনা মাটি ছাড়া। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে দেশকে স্বাভাবিক করে তুলেছিলেন। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর লুটতরাজ চলেছে দেশে। স্বাধীনতার উদ্দেশ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে তাবেদারি সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল সামরিক সরকার। স্বাধীনতার আদর্শ ভুলে দেশদ্রোহী রাজাকার আর স্বাধীনতা বিরোধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। স্বাধীন দেশে রাজপথে সংগ্রাম করতে হয়েছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের। ৯৬ সালে সরকার গঠন করে ইতিহাস উদ্ধার করতে হয়েছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। কৃষিকে প্রাধান্য দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করে। ৩০ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি পুরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেই লক্ষ্যে বাজেট প্রণয়ন করে কৃষি খাতে ভর্তুকির প্রস্তাব দিয়ে। সার আর কৃষি সরঞ্জামের যোগান দিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকারিভাবে। গ্রামীন অর্থনীতির ভাবনা নিয়ে প্রকল্প প্রস্তুত করে সুনির্দিষ্টভাবে। পাঁচ বছরেই দেশের ৩০ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটিতি পুরণ করে খাদ্য রপ্তানি করার সক্ষমতা অর্জন করে ফেলে বাংলাদেশ। এটাই ছিল বর্তমান সরকারের প্রথম সাফল্য এবং দেশের জন্য উন্নয়নের প্রথম ধাপ। আন্ত:জিলা বানিজ্য থেমে গিয়েছিল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে। সরকার সড়ক, রেল এবং নদী পথের সংস্কার করেছে পরিকল্পিতভাবে। যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু (এখন) নির্মাণ করে উত্তর এবং দক্ষিণ বঙ্গের বানিজ্য প্রসারিত করে দিয়েছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষ একটি সুবিশাল বাজার। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হওয়ার কারণে এই বাজার এখন দেশেই সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে তা হবে আরও বড়। এই সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যমাত্রা সরকারের সাফল্য এনে দিয়েছে। এখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি হওয়ায় ক্ষুদ্র শিল্প উৎসাহিত হয়েছে। গ্রামের মানুষ শহরের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভাল আছে। রপ্তানি পণ্যের অন্যতম প্রধান বাঁধা ছিল বিদুৎ উৎপাদন। বিদ্যুতের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকেই বদলে দিয়েছে। এখন বিদ্যুতের অভাবে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকেনা। তাই রপ্তানি বানিজ্য হয়েছে আশানুরুপ। এটাও সরকারেরই দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রার অংশ ছিল। এখন সর্বোচ্চ রিজার্ভ নিয়ে সরকার ভাল অবস্থানে। পরিকল্পনাটি সরকারের- রাজনীতির। এভাবে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রকে ঢেলে সাজাতে হয়েছে। কোন অলৌকিক বিস্ময়ে বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে আসেনি। দেশের উন্নয়নে দেশের রাজনৈতিক দুরদর্শিতা দরকার এবং লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। দেশে এখনো অনেক বাঁধা রয়েছে। অসাধু লুটেরা আর চরিত্রহীন নেতারা টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করছে। কিন্তু দেশের যে সাফল্য আর উন্নয়ন বর্তমান সরকার দেখিয়েছে তা সহজ ছিলনা। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতাটাও জরুরী। এবং কেবলমাত্র যোগ্য নেতৃত্বই পারবে সেই লক্ষ্যটি ধরে রাখতে। এখন যে সব দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছে। তারা অতীতে বাংলাদেশকে দরিদ্র দেশ হিসাবেই জেনেছে। বাংলাদেশের সক্ষমতাটি জানতে পারেনি। যোগ্য নেতৃত্ব পেলে দেশকে কোথায় নিয়ে যাওয়া যায় তা আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করে দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ নেতৃত্বের গুণেই যোগ্য অবস্থানে উঠে এসেছে কারও দয়ায় নয়। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আশিয়ান দেশভুক্ত দেশের সাথে সমান তালে এগিয়ে যাবে। সেটাই এখন বাংলাদেশের লক্ষ্য।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরন্টো, কানাডা
২৬ নভেম্বর ২০২০।