রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যার মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়ার পর এবার মিয়ানমারে ‘যুদ্ধাবস্থার’ কারণে দেশটি থেকে শত শত বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ বাস্তুভিটা ছেড়ে সীমান্তের শূন্যরেখায় এসে জড়ো হয়েছেন।
এমন একটি পরিপ্রেক্ষিতে বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে গতকাল বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘মূলত আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে রোহিঙ্গাদের পর এবার বৌদ্ধসহ অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর লোকেরা দেশ ছাড়ছেন।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রানসা সীমান্ত এলাকার শূন্যরেখায় মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৪০ পরিবার অনুপ্রবেশের চেষ্টায় আছে। সেখানে খোলা জায়গায় পলিথিনের তাঁবু টেনে বসবাস করছে পরিবারগুলো। তীব্র শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। আশপাশের এলাকার মানুষ তাঁদের খাদ্য দিয়ে সহায়তা করছেন।
এদিকে, সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সমন্বয়ে একটি দল সীমান্তে শরণার্থীদের পরিস্থিতি পর্যক্ষেণ করেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সেখানে পাঠিয়েছে প্রশাসন।
এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকটি টহল দল সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। গতকাল বুধবার হেলিকপ্টারে করে সদস্যদের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদুর রহমান গতকাল বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় শরণার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর টিম পাঠানো হয়েছে। শরণার্থীদের মনোভাব জানার পর সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গত শনিবার মিয়ানমারের চীন রাজ্য থেকে ১২৪ জন বৌদ্ধ শরণার্থী রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রানসা ইউনিয়নের চাইক্ষাং সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান নেন। এরপর গতকাল বুধবার আরো ৪০টি পরিবার সেখানে জড়ো হয়। আরো বেশ কিছু শরণার্থী পথে আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গত ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন ও চীন রাজ্যে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের পর আতঙ্কে খুমি, খেয়াং, বম ও রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে থাকে। তাদের একটি অংশ বাংলাদেশের দিকে আসে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি দেশটির বিজিপি ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি স্থাপনায় হামলা করে। এর পর থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।
রাখাইনের বুথিডং, রাথিডং এলাকার স্থানীয়রা নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে পারলেও চীন রাজ্যের প্লাতোয়া জেলার লোকজন বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে হওয়ায় সেদিকে সরে আসে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী মুসলিম রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করতে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে উখিয়া-টেকনাফে। এ ছাড়া আগে থেকেই এখানে রয়েছে আরো প্রায় চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা।
সূত্র : এন টি ভি