বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে দেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। ডিআইপি ডটগভ ডটবিডির তথ্য অনুযায়ী, ই-পাসপোর্ট হলো একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক চিপ রয়েছে।এ চিপের মধ্যে রয়েছে বায়োমেট্রিক তথ্য, যা পাসপোর্টধারীর পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে মাইক্রোপ্রসেসর বা চিপ এবং অ্যান্টেনাসহ স্মার্টকার্ড প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। পাসপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চিপে সংরক্ষণ করা হয়। ই-পাসপোর্টে যেসব বায়োমেট্রিক তথ্য নেয়া হয় সেসব হলো- ছবি, আঙ্গুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) ও আইরিশ। ইলেকট্রনিক বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থা (ই-বর্ডার) দিয়ে পাসপোর্ট চিপের বাইরের বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর তুলনামূলক যাচাই করা হয়।পাবলিক কি ইনফ্রাষ্ট্রাকচারের (পিকেআই) মাধ্যমে পাসপোর্ট চিপে থাকা তথ্য যাচাই করা হয়। তাই জালিয়াতি করা কঠিন।
সাধারণ পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের আবেদনও অনলাইনে পাওয়া যাবে। অনলাইনে আবেদন করার পুরো প্রক্রিয়াটি জানুন-
প্রথম ধাপঃ
> www.epassport.gov.bd এ গিয়ে Apply Online এ ক্লিক করুন
> যেসব তথ্য চায় তা দিয়ে সঙ্গে ই-মেইল দিয়ে একটি একাউন্ট খুলুন। ইমেইলে confirmation মেইল আসবে, account active করে নিন। ইনবক্সে মেইল খুজে না পেলে Junk Mail/ Spam Mail ফোল্ডারে খুঁজলে পেয়ে যাবেন।
> Account খোলার পর Apply for a new-e-passport দিন।
> যা যা তথ্য প্রয়োজন সেগুলো সঠিকভাবে দিন।
> অনেকেই চিন্তিত থাকেন Md এরপর dot দিব কি দিব না? Dot না দিলে সমস্যা হবে না তো?
মনে রাখবেন, ই-পাসপোর্টে বর্ণ ছাড়া কোনো চিহ্ন প্রিন্ট হয় না। সুতরাং না দেয়াই উত্তম।
> তথ্য দেয়ার সময় কখনো ভাড়া বাসার ঠিকানা দিবেন না। সবসময় স্থায়ী ঠিকানা দেয়ার চেষ্টা করবেন।
> আপনি কোন ধরনের পাসপোর্ট করবেন উল্লেখ করে দিবেন। ই-পাসপোর্ট দুই ধরনের। একটি ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার।
৪৮ পেইজ ৫ বছরের মেয়াদ
*রেগুলার- ৪,০২৫ টাকা, ২১ কার্য দিবসে
*এক্সপ্রেস-৬,৩২৫ টাকা, ১০ কার্য দিবসে
*সুপার এক্সপ্রেস- ৮,৬২৫ টাকা, ২ কার্য দিবসে
৪৮ পেইজ ১০ বছরের মেয়াদ
*রেগুলার- ৫,৭৫০ টাকা, ২১ কার্য দিবসে
*এক্সপ্রেস- ৮,০৫০ টাকা, ১০ কার্য দিবসে
*সুপার এক্সপ্রেস- ১০,৩৫০ টাকা, ২ কার্য দিবসে
৬৪ পেইজ ৫ বছরের মেয়াদ
*রেগুলার- ৬,৩২৫ টাকা, ২১ কার্য দিবসে
*এক্সপ্রেস- ৮,৬২৫ টাকা, ১০ কার্য দিবসে
*সুপার এক্সপ্রেস- ১২,০৭৫ টাকা, ২ কার্য দিবসে
৬৪ পেইজ ১০ বছরের মেয়াদ
*রেগুলার- ৮,০৫০ টাকা, ২১ কার্য দিবসে
*এক্সপ্রেস- ১০,৩৫০ টাকা, ১০ কার্য দিবসে
*সুপার এক্সপ্রেস- ১৩,৮০০ টাকা, ২ কার্য দিবসে
> কোন পদ্ধতিতে পেমেন্ট করতে চান সেটা উল্লেখ করে দিতে হবে। এখন সম্ভবত অনলাইনে বিকাশ বন্ধ। তাই অফলাইনেই করতে হবে।
> সব তথ্য ঠিক মতো দেয়ার পর সাবমিট করে দিবেন। সাবমিটের পর ই-মেইলেও একটা confirmation মেইল আসবে। চেক করে নিতে পারেন।
> Application form টা download করে রাখুন।
দ্বিতীয় ধাপঃ
> Application Submit এরপর schedule select করতে হবে
> আপনার মন মতো যে কোনো খালি slot এ appointment নিতে পারবেন।
তৃতীয় ধাপঃ
> নির্ধারিত যে কোনো ব্যাংকে গিয়ে টাকা পরিশোধ করে দিলেই হবে। কোন ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা দিবেন- ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক
> ব্যাংকে আপনার নাম চাইবে শুধু। passport এ দেয়া হুবহু নামটা দিবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে NID এবং Application এর কপি দেখতে চায়। তাই এক কপি নিয়ে যাবেন।
> টাকা জমা দেয়ার পর রিসিট/ payment slip দিবে/ সেটা যত্ন করে রাখবেন।
চতুর্থ ধাপঃ
> নিচের ডকুমেন্টগুলো নিয়ে যাবেন
> পার্সপোর্ট ফর্মের প্রিন্টেড কপি (both side print)
> Appointment/ Order slip কপি
> NID এবং NID এর ফটোকপি
> বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানির বিলের ফটোকপি
> Student ID Card এর ফটোকপি (শিক্ষার্থীদের জন্য)
> ব্যবসায় দলিল (ব্যবসায়ীদের জন্য)
> Office ID card কপি এবং আনুশাঙ্গিক কাগজ পত্র (জব করেন যারা তাদের জন্য)
> নিকাহ নামার দলিল (বিবাহিতদের জন্য)
> কোনো সাদা/হালকা রঙের জামা পরবেন না
আগারগাঁও RPO এর জন্য
> ৩০৮ নং কক্ষে যাবেন, উপযুক্ত কাগজ গুলো নিয়ে, application form দেখে সেখান থেকে একটা সিল এবং সিরিয়াল লিখে দিবে।
> ৪০১ নং কক্ষে ৩০৮ এ দেয়া সিরিয়াল মতো আপনাকে প্রবেশ করানো হবে। এই কক্ষে আপনার ডকুমেন্ট সব ঠিক আছে কিনা চেক করা হবে।
> application online এ সাবমিটে কোনো ভুল হয়ে থাকলে এখানে বলে নিবেন। তারা মার্ক করে দিবে আপনার ফর্মে। চেক শেষে তারা একটা সিল এখন সাইন করে দিবে।
> ৪০৩ নং কক্ষ পুরুষ, ৪০৪/৪০৫ নং কক্ষ মহিলা ও শিশুদের বায়োমেট্রিক করানো কক্ষ। ৪০১ নং কক্ষ থেকে সিল নেয়ার পর। এই কক্ষে আপনার ডিকুমেন্ট রিচেক করা হবে, ডকুমেন্ট স্ক্যান করা হবে এবং কোনো সংশোধন থাকলে সংশোধন করা হবে।
> ২ হাতের ১০ আঙ্গুলের ছাপ, চোখ স্ক্যান ও ডিজিটাল স্বাক্ষর নেয়া হবে।
> কাজ শেষ হলে Delivery Slip দিয়ে দিবে।
পঞ্চম ধাপ (পুলিশ ভ্যারিফিকেশন):
> পুলিশ বাসায়ও আসতে পারে থানায়ও ডাকতে পারে
> থানায় ডাকলে, শিক্ষার্থী হলে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। কারণ তার একটা স্বাক্ষরের দরকার হবে
> ডকুমেন্ট যা সঙ্গে রাখতে হবে-
> জাতীয পরিচয়পত্রের কপিNID copy
> স্টুডেন্ট আইডির কপি Student ID Copy
> এসএসসির সার্টিফিকেট SSC Certificate
> পিতার এনআইডি/জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
> মায়ের পরিচয়পত্রের কপি
> ইউটিলিটি বিলের কপি
> জমি/ফ্লাটের দলিলের কপি, স্থায় ঠিকানা ঢাকা হলে।
> পুলিশ সম্ভবত চা নাস্তার জন্য ৫০০-১০০০ নিতে পারে। যদি কোনো ভুল থাকে পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বাড়বে।
ষষ্ঠ ধাপ (পাসপোর্ট ডেলিভারি):
> পুলিশ ভেরিফিকেশনের কিছু দিন পর (৪-৬ দিন) Application Status, Enrollment pending Approval থেকে Enrollment Approved হবে। এবং পাসপোর্টের তৈরির কাজ শুরু হবে।
> Enrollment Approved status এর কিছু দিন পর (২-৩দিন) status হবে Passport Shipped।
> Passport Shipped এর ১/২ দিন পর SMS, email এবং status হবে ePassport is ready for issuance তখন পার্সপোট আনতে RPO তে যেতে হবে।
> সঙ্গে delivery slip এবং NID এর কপি নিয়ে যাবেন।
> ৩০১ নং কক্ষের ডান পাশে আপনার delivery slip দিয়ে সিরিয়াল নিবেন।
> আপনার সিরিয়াল আসলে ৩০১নং কক্ষের বাম পাশে স্বাক্ষর আর ফিঙ্গার স্ক্যান দিয়ে e-Passport নিয়ে আসবেন।
এই হলো ই-পাসপোর্ট আবেদনের পুরো প্রসেস। এই পুরো প্রসেসের সময় আপনি আপনার পাসপোর্ট প্রসেসের অবস্থা দেখতে পাবেন আপনার account এ login করে।
কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখবেন-
> দালাল থেকে দূরে থাকুন
> কিছু জানার থাকলে হয় হেল্প ডেস্কে জিজ্ঞাসা করুন, নয় আশেপাশে মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন। খামাখা অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা অফিসারদের বিরক্ত করবেন না।
> পারমানেন্ট আড্রেস ঠিক মতো দিবেন।
> যা যা ডকুমেন্ট দরকার সঙ্গে রাখবেন।
> সময় হিসাব করবেন application RPO তে জমা দেয়ার পর থেকে।
বিঃদ্রঃ এখানে শুধু প্রাপ্ত বয়স্কদের ই-পাসপোর্ট আবেদনের পুরো প্রক্রিয়ার বিবরণ দেয়া হয়েছে। এই লিঙ্কে ঢুকে পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। লিঙ্কঃ http://bit.ly/epassportbd2020