মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন এখন এমন একটি ডিভাইস যা করোনার যুগে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। বাড়ি থেকে কাজ করা থেকে নিয়ে বিনোদনের জন্য় পর্যন্ত লোকেরা এই ডিভাইসটি ব্য়বহার করেছে। এই কারণেই স্মার্টফোনের ব্যাটারিতে সর্বাধিক চাপ পড়েছে এবং এর কারনেই ফোনের ব্য়াটারি লাইফ কম হয়ে যাচ্ছে।
আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি কম চলছে? ফোন বার বার চার্জ দিতে হয়ে? তবে আপনার এই সমস্য়ার সমাধান করার জন্য চলুন জেনে নিই কিছু টিপস আজ।
চার্জ করার আগে সরিয়ে ফেলুন কাভার-
ফোন চার্জ করার আগে ফোনের কভারটি সরিয়ে ফেলুন। অনেক সময় ফোনের কভারের কারনে চার্জারটির পিনটি সঠিকভাবে সংযুক্ত হয়ে না। এছা়ড়া চার্জিং থেকে ফোন গরম হয়ে যায়, তাই ফোন থেকে কভারটি সরিয়ে দিলেই ভাল। কভার না করাই ভাল।
চার্জ করবেন আসল চার্জার দিয়ে-
সবসময় আপনার ফোনের সাথে দেওয়া চার্জারটি দিয়ে চার্জ করবেন। আপনি যদি অন্য কোনও চার্জার ব্যবহার করেন তবে এটি আপনার ফোনের ব্যাটারিতে খারাপ প্রভাব ফেলবে। একই সাথে ফোনের ব্যাটারির খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
২০ শতাংশ চেয়ে কম ব্যাটারি থাকলে চার্জ করুন-
ফোনের ব্যাটারি কমপক্ষে ২০ শতাংশ হলে চার্জ করা উচিত। ফোনের ব্যাটারি বার বার চার্জ দিলে ফোনের ব্যাটারি লাইফ কম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সর্বদা একই ধরণের পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করুন যা আপনার ব্যাটারির জন্য উপযুক্ত।
ব্যবহার করবেন না ফাস্ট চার্জিং অ্যাপ্লিকেশন-
ফোনে ব্যাটারি সঞ্চয় বা ফাস্ট চার্জ করার থার্ড পার্টির অ্যাপ ব্য়বহার না করাই ভাল। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ফোনের ব্য়াকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে, যা ব্যাটারিতে আরও চাপ দেয়।
স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিন-
সব এন্ড্রয়েড ডিভাইসেই স্ক্রিন ব্রাইটনেস এডজাস্ট করার অপশন থাকে, কিন্তু আমরা অনেকেই “Auto” সেটিংসে দিয়ে রাখি যেটা আশেপাশের আলোর পরিমাণ দেখে নিজ নিজে ব্রাইটনেস কমায় বাড়ায়। জিনিসটা কাজের হলেও এটা ব্যাটারী লাইফের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
বিভিন্ন ফোনের অটো ব্রাইটনেস ফাংশন বিভিন্ন রকম। তবে বেশিরভাগ সময়ে প্রয়োজনের চেয়ে স্ক্রিন বেশি আলো নিয়ে বসে থাকে। যেহেতু স্ক্রিনই সবচেয়ে বেশি ব্যাটারী খায়, তাই ব্যাটারী লাইফ বাড়াতে চাইলে স্ক্রিন ব্রাইটনেস ম্যানুয়ালি এডজাস্ট করাই ভালো।
স্ক্রিন টাইমআউট কমিয়ে দিন-
স্ক্রিনই সবচেয়ে বেশি ব্যাটারী পাওয়ার খাওয়ার ওস্তাদ। Battery Stats চেক করলে দেখতে পাবেন ১ নাম্বার পাওয়ার খাদক আপনার ফোনের ডিসপ্লে। তাই আশা করি এটা বুঝা যাচ্ছে যত বেশি স্ক্রিন টাইমআউট দিবেন ততবেশি চার্জ চলে যাবে। তাই ১৫-৩০ সেকেন্ড এর ভিতর স্ক্রিন টাইমআউট নামিয়ে আনুন।
AMOLED ডিসপ্লের সাথে কালো ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন-
বর্তমানে মূলত দুই ধরনের স্ক্রিন আছে, LCD আর AMOLED। যদি আপনার ফোনের ডিসপ্লে LCD হয় তাহলে ওয়ালপেপার নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই, চার্জ খাবেই। আর আপনি যদি AMOLED ডিসপ্লের ফোন ব্যবহার করেন তাহলে খেয়াল করুন।
একটা ডিসপ্লেতে যতগুলো পিক্সেল আছে, সেগুলো একটা একটা করে আলোকিত করার মাধ্যমে AMOLED ডিসপ্লে কাজ করে। এর মানে হল, কালো বা ডার্ক কালারের পিক্সেলগুলো তেমন বেশি চার্জ খায় না। তাইলে আপনি কালো রঙের ওয়ালপেপার ব্যবহার করে চার্জ বাঁচাতে পারবেন।
কাজ শেষে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস ক্লোজ করুন-
বেশিরভাগ সময় আমরা কাজের শেষে অ্যাপস ক্লোজ করি না বা ঐভাবে মিনিমাইজ করে রাখি। কিন্তু এটি আপনার চার্জকে ধরে রাখতে ব্যাঘাত ঘটায়। তাছাড়া বেশ কিছু অ্যাপস আছে যেগুলো অনেক বেশি নষ্ট করে সেগুলো অবশ্যই বন্ধ করবেন। তাছাড়া এন্ড্রোয়েডের কিছু ডিফল্ট সেটিং আছে যেখান থেকে ভারি অ্যাপগুলো অর্থাৎ যে অ্যাপস বেশি চার্জ নষ্ট করছে সেগুলো দেখতে পারবেন। সেজন্য Settings > Battery থেকে দেখে সেগুলো কাজ শেষে ক্লোজ করুন।
ভাইব্রেশন অফ রাখুন ও অপ্রয়োজনীয় সাউন্ড বন্ধ করুন-
প্রয়োজন ছাড়া আপনার ফোনের ভাইব্রেশন বন্ধ রাখুন। আর বিভিন্ন অ্যাপস বা সেটিং থেকে অপ্রয়োজনীয় সাউন্ড অফ করে রাখুন। Settings > Sound & notification > Other sounds এখান থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস বন্ধ করুন।
প্রয়োজন ছাড়া একাউন্টের Sync বন্ধ করুন-
এটাকে অনেকটা চার্জ চোরও বলা যায় কারণ কখন কোনদিকে নতুন সার্ভিস রান করে ব্যাটারীর চার্জ খেয়ে ফেলবে আপনি নিজেও বুঝবেন না। ছবির মত সব Sync অন করা থাকলে অযথা চার্জ খাবে। তাই যেসব সার্ভিস ইউজ করেন না, সেগুলো অফ করে দিন। Sync অফ করার জন্য Settings > Accounts > Google যান।
যথাসম্ভব Widgets কমিয়ে রাখুনঃ
Widgets আপনার কাজকে সহজে করার কিছু শর্টকার্ট অ্যাপস। কিন্তু অতিরিক্ত widgets আপনার ফোনকে স্লো সহ চার্জ কমায়ে দিতে পারে। সেহেতু যত-সম্ভব widgets কম রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজন ছাড়া না ব্যবহার করায় ভালো, আমার মনে হয়।
এ্যানিমেশন অফ রাখুন-
আপনি কি জানেন আপনার ফোনের কিছু ফ্ল্যাশি এ্যানিমেশন আপনার ফোনের ব্যাটারী লাইফ কমিয়ে দিতে পারি। আগে এগুলো অফ করা না গেলেও এখন আপনি সেগুলো অফ করতে পারবেন। Settings > About phone অপশন থেকে আপনি এটি অফ করতে পারবেন। “Developer options” “Window animation scale,” “Transition animation scale” এবং “Animation duration scale.” সবগুলা অপশন অফ করতে হবে। আপনাকে চেঞ্জ কনফার্ম করতে ফোন রিবুট প্রয়োজন পড়তে পারে।
অপ্রয়োজনীয় রেডিওসমূহ বন্ধ করে দিন-
হার্ডওয়্যার রেডিও, যেমন এলটিই, জিপিএস, এনএফসি, ব্লু-টুথ এবং ওয়াই-ফাই আজকাল সব ফোনের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। রেডিও এর প্রয়োজন না হলে তা বন্ধ করে রাখা উচিৎ।
খুঁজে বের করুন ব্যাটারী খাদক অ্যাপস-
আপনি ফোনের স্ক্রিন অফ করে রাখলেও অনেক অ্যাপস চাইলে সিস্টেম রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু অধিকবার এন্ড্রয়েডকে এরকম ঘুম থেকে তুললে wakelock হয় ফলে ওই অ্যাপের জন্য চার্জ যেতেই থাকে। এসব Wakelock Trigger কারী অ্যাপদের ধরার জন্যও একটি এপ্লিকেশন আছে যার নাম WakeLock. এটা ব্যবহার করে কোন অ্যাপ কত সময় ধরে CPU অন রাখলো চেক করতে পারবেন। বেশি তেড়িবেড়ি করলে সোজা আনইন্সটল মেরে দিবেন। তবে এই অ্যাপের জন্য রুট আবশ্যক।