ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে জনপ্রিয় অভিনেতা সাদেক বাচ্চু আর নেই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহ… রাজিউন)।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,মৃত্যুকালে সাদেক বাচ্চুর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী।
ডা. আশীষ বলেন, সোমবার সকাল থেকেই তার হার্টবিট বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েকবার। অবশেষে আজ ১২টা ৫ মিনিটে সাদেক বাচ্চু মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে, সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হন সাদেক বাচ্চু। পরে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গেল ৬ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। গত শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) তার পরিবার সূত্রে জানা যায় এ অভিনেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এর পর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে সাদেক বাচ্চুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় শনিবার রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালটির কোভিড ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন এই অভিনেতা। তার শরীরের আর উন্নতি হয়নি। রবিবার থেকেই তার হার্ট ও ফুসফুস ৮৫ শতাংশ অকেজো ছিল। আজ সোমবার সকাল থেকেই কয়েকদফায় তার হার্টবিট বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়েছে। ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থাতেই অবশেষে চলে গেলেন আজ না ফেরার দেশে।
তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বরেণ্য এ অভিনেতাকে হারিয়ে শোক প্রকাশ করছেন তার ভক্ত ও অনুরাগীরা।
প্রসঙ্গত, সাদেক বাচ্চুর আসল নাম মাহবুব আহমেদ সাদেক। চাঁদপুরে দেশের বাড়ি হলেও জন্ম তার ঢাকাতেই। সিনেমার কিংবদন্তি মানুষ এহতেশাম ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রে তার নাম বদলে সাদেক বাচ্চু করে দেন। সেই থেকেই তিনি এ নামে পরিচিত।
টিএন্ডটি নাইট কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেন সাদেক বাচ্চু। কর্মজীবনে তিনি ডাক বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অভিনয় শুরু তার ১৯৬৩ সালে, খেলাঘরের মাধ্যমে রেডিও দিয়ে। একই সঙ্গে মঞ্চেও বিচরণ করেন। প্রথম থিয়েটার ‘গণনাট্য পরিষদ।’ ১৯৭২-৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যখন এদেশের সাংস্কৃতিক বলয় নতুনভাবে তৈরি হচ্ছিল, তখন যোগ দেন গ্রুপ থিয়েটারের সাথে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ১৯৭৪ সালে প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিষিক্ত হন।
প্রথম নাটক ছিল ‘প্রথম অঙ্গীকার নাটকটি পরিচালনা করেন আবুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। সোজন বাদিয়ার ঘাট, নকশী কাঁথার মাঠ সহ অসংখ্য নাটকে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। ঝুলিতে যুক্ত হয় প্রচুর সুপারহিট নাটক।
১৯৮৫ সালে রামের সুমতি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বড় পর্দায় অভিষিক্ত হন। তার অভিনীত প্রথম দিকের চলচ্চিত্রে তিনি নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ে করেন। সুখের সন্ধানে চলচ্চিত্র দিয়ে খল চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর থেকে খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পরিচালক এহতেশাম-এর চাঁদনী চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তার মঞ্চনাম ‘সাদেক বাচ্চু’ এহতেশামের দেয়া। চাঁদনী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় এহতেশাম তাকে এই নাম দেন। এরপর থেকে তিনি তার মঞ্চনামে চলচ্চিত্র জগতে পরিচিতি পান। মৌসুমী চলচ্চিত্রে ‘চাচা ঢাকা কতদূর?’ সাদেক বাচ্চুর এই সংলাপটি ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। এরপর বহু সিনেমায় তাকে দেখা গেছে দুর্দান্ত অভিনয়ে। ২০১৮ সালে ক্যারিয়ারের একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন সাদেক বাচ্চু।
উল্লেখ্য, মাহবুব আহমেদ সাদেক তার অভিনয় জীবনে প্রায় ৫০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।