মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ হাফেজ নজরুল, নারায়নগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত মসজিদের ইমাম ইসলামিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারীর (৬০) লাশ কুমিল্লার মুরাদনগরে দাফন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার সকালে উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পুটিয়াজুরি গ্রামের কবরস্থানে ওই লাশ দাফন করা হয়। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারী পুটিয়াজুরি গ্রামের মৃত আব্দুস সোবহানের ছেলে। তিনি মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা মাদরাসা থেকে দাখিল, বাখরনগর মাদরাসা থেকে আলিম ও ফাজিল এবং সোনাকান্দা মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন।
মৃত্যুকালে তিনি বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অনেক স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। নিহতের লাশ গ্রামের বাড়ি আসছে এমন খবরে আশ-পাশের কয়েক গ্রামের সহস্রাধিক লোক তাকে এক নজর দেখার জন্য জড়ো হয়। নিহতের বৃদ্ধ মা কমলা খাতুন (৮২) অশ্রুসজল চোখে বলেন, দীর্ঘ ২২/২৩ বছর যাবত আমার ছেলে ওই মসজিদে ইমামতি করতেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে আমার প্রাণপ্রিয় ছেলের এমন মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় মৃত্যু দেখতে হবে কল্পনাও করি নাই। মনে হচ্ছে আমার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আপনারা সকলে আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন। পুটিয়াজুরি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ বলেন, মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারী যদিও স্বপরিবারে নারায়নগঞ্জ বসবাস করতেন, তবুও তিনি এলাকার সাধারণ মানুষ ও সামাজিক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করতেন।
ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছিলেন ভদ্র ও বিনয়ী গুণের অধিকারী। আকস্মিক দূর্ঘটনায় তাঁর মর্মান্তিক মৃতুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর দাফন কাজে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্য কর্মী আবুল কালাম আজাদ ও সিএইচসিপি সুমন সরকার বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিহতের লাশ দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি গ্রামের সব শ্রেণি পেশার মানুষের দু:খ-দূর্দশায় এগিয়ে আসতেন। তাই তাঁর মৃত্যুতে আমরা সকলেই শোকাহত।
এ দিকে নারায়নগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও আলহাজ্ব ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি। তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে রবিবার সকালে তাঁর নিজস্ব ফেইসবুক আইডিতে ওই শোক প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে নারায়নগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়ার সময় এক বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ গুরতর অগ্নিদগ্ধ ৩৭ জনকে জরুরী ভিত্তিতে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে রবিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ২৪ জন মারা যায়। বাকীদের অবস্থাও আশংকাজনক বলে জানা গেছে।