প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ‘রিইনফেকশন’ নিয়ে চিন্তিত গোটা বিশ্ব। তাই একবার সংক্রামিত হওয়ার পরেও দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর অহরহ মিলছে। ভাইরোলজিস্টরা যার জন্য চেষ্টা করছেন এমন ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করার যেটি সবরকমের করোনাভাইরাসের স্ট্রেনকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। সেই গবেষণাতেই সাফল্যের পথে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
এদিকে ব্রিটিশ সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার পরে কেমব্রিজের ভ্যাকসিনে আর্থিক অনুদান দিয়েছে। এই ভ্যাকসিনের প্রথম পর্বের ট্রায়াল শুরু হবে আগামী অক্টোবরেই। অক্সফোর্ডের মতো ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন হলেও কেমব্রিজের তৈরি টিকার কিছু বিশেষত্ব আছে। এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেটি প্রয়োগ করতে ইঞ্জেকশনের দরকার পড়বে না। বিটা-করোনাভাইরাসের পরিবারের যে কোনও ভাইরাল স্ট্রেনের সংক্রমণ রুখতে পারবে এই টিকা।
কী নতুনত্ব আছে কেমব্রিজের টিকায়?
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ভাইরাল জুনটিক্স ল্যাবরেটরির প্রধান জোনাথন হিনে বলেছেন, এই টিকার বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা এখনই সামনে আনা যাবে না। এর বিশেষত্ব হল ভেক্টর ভাইরাসকে ব্যবহার করেই টিকা তৈরি হয়েছে তবে করোনার জিন সরাসরি নেওয়া হয়নি। ল্যাবরেটরিতে বিশেষ উপায় সিন্থেটিক জিন বানানো হয়েছে যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে যে কোনও রকম আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাল স্ট্রেনের মোকাবিলা করার জন্য সক্রিয় করে তুলবে।
সেটা কী রকমভাবে হবে?
জোনাথন বলেছেন এই ভ্যাকসিনের নাম DIOS-CoVax2। ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) ভ্যাকসিন। করোনাভাইরাসের যত রকমের ভাইরাল স্ট্রেন হতে পারে তার অনুরূপ করেই সিন্থেটিক জিন ডিজাইন করা হয়েছে ল্যাবরেটরিতে। তার জন্য কম্পিউটার অ্যালগোরিদমে বহু সংখ্যক অ্যান্টিজেন বা ভাইরাল প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যে সমস্ত অ্যান্টিজেন মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে পারে তাদের শনাক্ত করে সেইমতো জিন ডিজাইন করা হয়েছে। এই জিন ভেক্টর ভাইরাসের সঙ্গে মিলিয়ে টিকা তৈরি হয়েছে।
কীভাবে কাজ করবে এই ভ্যাকসিন?
ভাইরোলজিস্ট ডক্টর জোনাথন বলছেন, মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে না। তিন মাসের মধ্যেই অ্যান্টিবডির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই রিইনফেকশনের ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। সেই জন্য এই টিকা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যা শরীরে ঢুকলে সরাসরি টি-কোষকে (T-Cell)সক্রিয় করে তুলবে। এই টি-কোষ বা টি-লিম্ফোসাইট কোষ (T Lymphocyte) হল শরীরের বর্ম। এর কাজ রক্ষীর মতো। মানুষের জন্মের পর থেকে মৃত্যু অবধি, এই টি-কোষ শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা ইমিউন সিস্টেমকে সচল রাখার চেষ্টা করে। অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজও এই কোষেরই।
এছাড়া এদের নিজস্ব রিসেপটর থাকে (TCR) যার কাজ হয় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা সংক্রামক প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করে তাদের ধ্বংস করা। এই টি-কোষও আবার রিসেপটর প্রোটিনের উপর ভিত্তি করে দুই রকমের হয়। সাধারণত CD8 রিসেপটর প্রোটিন যুক্ত হলে টি-কোষ সাইটোটক্সিক হয়ে ওঠে (Cytotoxic) । তখন তাকে বলে ঘাতক কোষ। এই কোষের কাজ হয় ভাইরাল প্রোটিন বা অ্যান্টিজেনকে নিষ্ক্রিয় করে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলা।
আর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া যদি শরীরের কোনও কোষে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি শুরু করে দেয়, তাহলে ভাইরাস সমেত সেই কোষকে নষ্ট রে দিতে পারে ঘাতক টি-কোষ। বিজ্ঞানীরা এই ঘাতক টি-কোষকেই জাগিয়ে তুলতে চাইছেন। আর সেই কাজই এই টিকা করতে পারবে বলে দাবি করেছেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। সুত্রঃ দ্য ওয়াল।