যখন বিশ্বে প্রথমে চিনের উহানে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয় তখন একে নিউমোনিয়ার মতো এবং ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে এমন ভাইরাস মনে করা হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীদের শরীরে স্থায়ী ভাবে কিছু সমস্যা লক্ষ্য করেছেন চিকিৎসকেরা। এই ক্ষতি যে শুধু আক্রান্ত হওয়ার সময়ই দেখা গিয়েছে তা নয়। সেরে ওঠার পরও অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে সেই ব্যক্তির ফুসফুসে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। এরই সঙ্গে কিডনি এবং হার্টেরও ক্ষতি করছে এই ভাইরাস।
কমবয়সিদের মধ্যেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে থাকার সমস্যা দেখা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, অনেক সময়ই করোনা আক্রান্তের সেরে ওঠার পরও এই সমস্যাগুলি রয়েই যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের জেরে মৃত এক রোগীর দেহের ময়নাতদন্ত করে সেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কোভিড ১৯ ভাইরাস কী কী প্রভাব ফেলেছে তা গবেষণা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইম্পেরিয়াল কলেজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দশটি করোনায় মৃত দেহের ময়নাতদন্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, ফুসফুসে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে করোনা। ফলে স্থায়ী ভাবে ফুসফুসের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত হলে। এর পাশাপাশি কিডনি এবং থ্রম্বোসিসের সমস্যা দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ রোগীর দেহে। হার্ট, কিডনি এবং ফুসফুসেও রক্ত জমাট বেঁধেছে অনেকের।
এগুলি আবিষ্কারের ফলে বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসা করার পদ্ধতি এবং মৃতের হার কমিয়ে আনার একটা সুযোগ পাচ্ছেন। এর ফলে প্রতিষেধক আবিষ্কারের কাজেও লাভ হবে।
মস্তিষ্কেও কি প্রভাব ফেলে এই ভাইরাস?
এই ভাইরাসের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনও নিশ্চিত নন। এর আগে, সার্সের বেলায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছিলেন যে সার্স ভাইরাস কিছু রোগীর মস্তিষ্কেও অনুপ্রবেশ করতে পারত। তবে সার্স ও কোভিড-১৯-এর চরিত্রগত বেশ মিল থাকায় জার্নাল অব মেডিক্যাল ভায়ারোলজির গবেষকরা প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে যুক্তি দিয়েছিলেন যে করোনাভাইরাস কিছু কিছু স্নায়ুকোষ সংক্রামিত করতে পারে।
সুতরাং এর সংক্রমণ অঞ্চল নিয়ে এখনই নিশ্চিত হয়ে কিছু ধরে না নেওয়াই ভালো বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা শক্তিশালী বা দুর্বল, তার উপর নির্ভর করে এই অসুখ কার শরীরে কতটা থাবা বসাবে। বয়স্ক ব্যক্তি বা ডায়াবিটিস, নিউমোনিয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্য কোনও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার সমস্যায় ভুগলে রোগের লক্ষণ গুরুতর ভাবে প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
তাই, যেভাবেই হোক প্রতিরোধ করুন করোনাভাইরাস। যতটা সতর্ক থাকা যায় এবং নিয়ম মেনে চলা যায় তা করুন।