আগে কমিউনিষ্ট পার্টির নেতারা দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে ঘুরে কর্মী জোগাড় করত। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দি ছিল কমিউনিষ্টরা। কমিউনিষ্টদের সম্পর্কে মানুষের ধারনা ছিল কমিউনিষ্ট কর্মীরা নাস্তিক। তাই লেখাপড়া জানা না হলে তাদের জায়গা হতনা বেশীর ভাগ গৃহেই। যিতেন বোস নামে এক কমিউনিষ্ট নেতা ছিলেন, প্রায়ই আমাদের গ্রামে আসতেন। আমাদের গ্রামটি ছোট হলেও শিক্ষিত এবং আধুনিক হিসাবে পরিচিতি ছিল মুলতঃ দুই কারনে। (এক) ছেলেরা সংখ্যায় বেশী আর (দুই) বেশীর ভাগই তখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেই সময় শিক্ষিত ছেলেদের ন্যাপের প্রতি ( সমাজতন্ত্রের) আকর্ষন ছিল নীজেকে শিক্ষিত প্রমান করার জন্য। কমিউনিষ্ট পার্টির জন্ম অবিভক্ত ভারতে, দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানেও কমিউনিষ্টরা তত্ব প্রচারে ব্যস্ত ছিল এবং তাদের গনভিত্তি মজবুত ছিল। যিতেন বোস ছিলেন উচ্চ পর্যায়ের একজন কমিউনিষ্ট নেতা এবং জ্যোতি বসুর (ভারতের) সহপাঠি। চীরকুমার যিতেন বোস কাঁধে একটি কাপড়ের বেগ ঝুলিয়ে চষে বেড়াতেন গ্রাম থেকে গ্রমান্তরে। রাত হলে শুয়ে পরতেন যেখানে জায়গা মিলে, মাঝে মাঝে কোন বাড়ীর গরুর ঘরেও খড় বিছিয়ে নির্বিঘ্নে নিদ্রা যাপন করেছেন। ছেলেদের পেলেই জড়ো করতেন আর, রাজনীতির ক্লাশ করাতেন। বোঝাতেন রাজনীতি কি আর কমিউনিষ্ট দল কেমন দেশ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। মাঝে মাঝে আমার বয়সীদেরও চকলেট দিয়ে আকর্ষন করতেন। এমনই এক রাজনৈতিক ক্লাশে যিতেন বোস বললেন ” স্কুলের পরীক্ষায় ৩৩ পেলেই পাশ করা যায় কিন্তু, রাজনীতিতে ৯৯ পেলেও ফেল হয়ে যাবে”। যে কোন রাজনোতিক সিদ্ধান্ত শতভাগ সঠিক হতে হবে, ভুল হলে তা শুধরানোর সুযোগনেই। ভুল করলেই ছিটকে পরতে হয় লক্ষ্য থেকে। জাতীর পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বর্নাড্য রাজনৈতিক জীবনে কোন ভূল করেননি কিন্তু, একটি ভুল তিনি করেছেন, বিশ্বাঘাতক আর বেঈমানদের চরিত্র জেনেও আশ্রয় দিয়েছেন। বিশাল হৃদয়ের বংগবন্ধু আঘাতে নয় ভালোবাসা দিয়ে বন্ধু করতে চেয়েছিলেন। সেই ভুলেই বংগবন্ধু জীবন দিয়েছন স্বপরিবারে। অনেক তুখোড় নেতারা ভুল করেছেন, দলের সাথে বেঈমানি করে মন্ত্রী হয়েছেন। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেনি, আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন ভুলের অমোখ নিয়মে। দল হিসাবে ভুল করেছে বি এন পি। গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সন্ত্রাস করেছে, আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করেছে। নির্বাচনের ধারা থেকে সরে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্তে ছিটকে পরেছে রাজনীতি থেকে। ভুল বুঝেও বদলায়নি বরং, তাদের নীতিকেই সঠিক প্রমান করতে আবার ভুল করেছে রজনীতিতে। তা করেই দলটি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। ক্ষমতা প্রত্যাশী বড় দলের এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত কর্মী বাহিনীকে হতাশ করে দুরে ঠেলে দেয়। বি এন পি এখন সেই ভুলেরই মাশুল গুনছে প্রতিদিন। জামাতের সাথে জোট বাধার খেসারতটি কমনা, এখন বুঝেও সরাতে পারছেনা জামাতকে। জামাতই এখন বি এন পিকে গ্রাস করে ফেলেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই ভুলটি করেননি। যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন- ভুলে যাননি। এখনও যারা গোপনে/আবডালে স্বার্থের রাজনীতি করেন, তাদেরকেও চিহ্নিত করে ফেলেছেন। স্বার্থবাজদের সরিয়ে প্রকৃত জননন্দিত নেতৃত্বকে তুলে আনতে কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। করোনায় নৃত্য শুরু হয়েছিল দলে ঢোকা দুর্নীতিবাজ নেতাদের। দু এক জায়গায় হানাও দিয়েছিল তারা, ধরা পরে গেছে। এখন লালঘরে সরকারী দানা হজম করছেন নিরবে। বন্যার দুর্যোগে রা’টি করতে পারেনি দুর্নীতিবাজরা। এখন শুধু ঘরের ইঁদুর মারছেন, ইঁদুর বাইরেও আছে। ঘর পরিস্কার করে খোঁজ পরবে সকলেরই তাই- সাবধান। মুখেই গরম দেখান ভেতরে দুরুদুরু অবস্থা সকলেরই।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরেন্টো, কানাডা
১৭ আগষ্ট ২০২০।