বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিনের অনুমোদন করে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছিল রাশিয়া। এমনকী স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মেয়েকে সেই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় বলে জানা যায়। কিন্তু রাশিয়ার ভ্যাকসিন ঘোষণার পরপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা যখন করোনা প্রতিষেধকের সঠিক ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন, তখন রাশিয়া কী করে এত তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করল? নিয়ম মেনে সেই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালই বা কবে হল? আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলল এবার।
কারণ রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক ৫’ নিয়ে এবার প্রশ্ন উঠে গেল নিজের ঘরেই। সামান্য নিয়মকানুন না মেনে যেভাবে ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, তার তীব্র বিরোধিতা করে ইস্তফা দিলেন রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এথিকস কমিটির সদস্য এবং খ্যাতনামা চিকিৎসক অ্যালেকজান্ডার চুকালিন।
চিকিৎসাবিধি ও স্বাস্থ্যনীতির সামান্য নিয়ম না মেনেই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চুকালিন। আর দেশের এমন বিখ্যাত চিকিৎসকের পদত্যাগের ফলে অস্বস্তিতে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
উল্লেখ্য, রাশিয়ায় চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ধরণের নীতি নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে এথিকস কাউন্সিল। সেই কাউন্সিলেরই অন্যতম সদস্য ছিলেন চুকালিন।
ওই চিকিৎসকের অভিযোগ, যে কোনও ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল না করেই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকী তিনি বারবার এ নিয়ে বললেও তাতে কর্ণপাত করেনি রুশ প্রশাসন। সেই কারণেই পদত্যাগ করেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী মস্কোর গামালেয়া রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ ও দেশের ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের অন্যতম সের্গেই বরিসেভিচের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করে চুকালিন বলেন, ‘এই দুই চিকিৎসক ভ্যাকসিন তৈরিতে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনও নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করেননি।’
তাঁর সাফ কথা, ‘এই ভ্যাকসিন ঠিক ভাবে করা হয়নি। নৈতিক ভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নীতি ভঙ্গ করা হয়েছে।’
রাশিয়ার সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসক মহলেও এই ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, রুশ চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই এই প্রতিষেধকের উপর ভরসা করতে পারছেন না।
‘ডক্টরস হ্যান্ডবুক’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে হওয়া এই সমীক্ষার ফল বলছে, ৫২ শতাংশ চিকিৎসকই স্বেচ্ছায় প্রতিষেধক নিতে চাননি! তিন হাজার চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ জানিয়েছেন যে তাঁরা এই ভ্যাকসিন নেবেন। অধিকাংশ চিকিৎসক তো পরিজন এবং রোগীদের এই প্রতিষেধক ‘রেফার’ করার ব্যাপারেও দ্বিধাগ্রস্ত।
আবার অপর একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে রাশিয়ার মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ বলছেন, তাঁরা এই প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য তৈরি। ফলে, নিজের ঘরেই যে এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে তাঁর ‘সাফল্য’কে সেটা বোধহয় পুতিন স্বপ্নেও ভাবেননি। ইতোমধ্যে WHO-ও জানিয়েছে, তাদের ‘কোভ্যাক্স’ প্রকল্পে যে ৯টি প্রতিষেধকের পরীক্ষা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, তার মধ্যে এই রুশ ভ্যাকসিনের নাম নেই। সুত্রঃ দিজ মোমেন্ট।