লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৪ বাংলাদেশি নিহত এবং ৯৯ জন আহত হয়েছেন। বুধবার লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নিহতরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদী হাসান ও রাসেল। মাদারিপুরের মিজানুর রহমান ও কুমিল্লার রেজাউল। বিস্ফোরণে আহত ৯৯ জনের মধ্যে ২১ জন নৌবাহিনীর সদস্য। আর বাকি ৭৮ জন প্রবাসী বাংলাদেশি।
আহত নৌবাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বিজয়-এ দায়িত্বরত ছিলেন। নৌবাহিনী জানিয়েছে, তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত মেডিকেল সেন্টার (এইউবিএমসি)-এ ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের ইউনিফিলের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলিকপ্টার ও এম্বুলেন্সযোগে হামুদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তারা আশঙ্কামুক্ত। শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আহত নৌ সদস্যদের চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় নৌবাহিনী জাহাজ বিজয়-এর বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নৌবাহিনী জাহাজ, ইউনিফিল সদর দপ্তর ও বৈরুতস্থ বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ইউনিফিল হেড অব মিশন এবং ফোর্স কমান্ডার ও মেরিটাইম টাস্কফোর্স কমান্ডার সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। আইএসপিআর জানিয়েছে, ঘটনার পরই বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আল মোস্তাহিদুর রহমান সরেজমিনে বানৌজা বিজয় পরিদর্শন করেন এবং আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর ও যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সহযোগিতা করেন।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছে। ভূমধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বর্তমানে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ ইউনিফিলে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত রয়েছে। জাহাজটি লেবাননের ভূখণ্ডে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি লেবানিজ জলসীমায় ওই জাহাজ মেরিটাইম ইন্টারডিকশন অপারেশন, সন্দেহজনক জাহাজ ও এয়ারক্রাফটের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজকে উদ্ধার তৎপরতা এবং লেবানিজ নৌ সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে লেবাননে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় হেল্পলাইন চালু করেছে সেখানের বাংলাদেশ দূতাবাস। বাংলাদেশিদের হতাহতের খবর জানাতে হেল্পলাইনে অনুরোধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দুটি মারাত্মক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা বৈরুত। এ ঘটনায় শতাধিক নিহত এবং ৪ হাজার লোক আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের পর শহরটিতে দুই সপ্তাহের জন্য রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘােষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। আর লেবাননের শীর্ষ প্রতিরক্ষা পরিষদ বৈরুত দুর্যোগ কবলিত শহর বলে ঘােষণা করেছে।