আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় গত সপ্তাহে দুই দফা উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেয়ার পরও মঙ্গল অভিযানের নির্ধারিত সময় থেকে সরে আসতে হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। অবশেষে সবকিছু অনুকূলে নিয়ে মঙ্গলের পথে যাত্রা শুরু করেছে মুসলিম বিশ্বের প্রথম নভোযান। সফলভাবে যাত্রা শুরু করা আরব আমিরাতের এই মঙ্গল অভিযানের নাম “হোপ”।
জাপানের তেনিগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে স্থানীয় সময় ২০ জুলাই ৬টা ৫৮ মিনিটে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস হয়ে এইচ২-এ রকেটে করে মঙ্গল গ্রহের দিকে যাত্রা শুরু করেছে হোপ। ৫০ কোটি কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এটি পৌঁছবে মঙ্গলে; তারপর লাল এই গ্রহটির আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশ্লেষণ গবেষণা এগিয়ে নিতে তথ্য পাঠাবে পৃথিবীতে।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫০ বছর পূর্তিতে এটি মঙ্গলে পৌঁছবে। রকেটটির সফল উৎক্ষেপণ দেখে উচ্ছ্বাসিত আরব আমিরাতের উন্নত প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও এই হোপ মিশনের লিড বৈজ্ঞানিক সারাহ আল আমিরি। অনুভূতি-উত্তেজনা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, এটা আমার দেশের নাগরিকদের তেমন অনুভূতি যেমনটা ৫১ বছর আগে ঠিক এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো-১১ মিশন চন্দ্রে পৌঁছার পর সেখানকার নাগরিকদের হয়েছিল।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে বড় বড় নতুন স্বপ্ন দেখার দুয়ার খুলে দিল আরব আমিরাতে এই মঙ্গল অভিযান। ‘আজ আমি সত্যি খুবই আনন্দিত যে আরব আমিরাতের শিশুরাও নতুন বাস্তবতা, নতুন সম্ভাবনার পথে তাদের যাত্রা দেখল।’ আর আরব আমিরাতের নতুন এই পৃষ্ঠা পৃথিবীর মঙ্গল অধ্যায়ে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলেও আশার কথা জানান তিনি।
এর আগে মঙ্গলে যেসব অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে ভূতাত্ত্বিক গবেষণা। তবে, হোপকে পাঠানো হচ্ছে মঙ্গলের জলবায়ু নিয়ে বিশদ গবেষণা করার লক্ষ্যে। ৬ বছর ধরে হোপকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আরব বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে এই অভিযান সম্পর্কে আরব আমিরাতের উন্নত প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও মঙ্গল অভিযান হোপ’র উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক সারাহ আল আমিরি গত জুনে এক ভার্চুয়াল সেমিনারে বলেছিলেন, এই অভিযানে বিশাল চ্যালেঞ্জ আছে। তবে, এই চ্যালেঞ্জ এমন যা অর্জন করা সম্ভব বা উৎরানো যায়। এই অভিযান বিদ্যমান প্রযুক্তি চত্বরে মানিয়ে চলার পাশাপাশি দেশের প্রযুক্তি প্রকৌশলীদের নতুন করে সক্ষমতা বাড়াবে। এর ফলে স্পেসক্রাফট বিষয়ক আরও দক্ষ প্রকৌশলী তৈরি হবে যারা আরব আমিরাতের অর্থনীতির বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও ওই সেমিনারে জানিয়েছিলেন সারাহ।
জ্বালানি তেল নির্ভর অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে এবং জ্বালানি খাতের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে ২০০০ সালের মাঝামাঝি কৃত্রিম উপগ্রহ ভিত্তিক প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরাত।