মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেছেন, মিয়ানমার যে পথে হাঁটছে তা আশঙ্কাজনক। ৬০, ৭০ বছর বিচ্ছিন্ন থাকার পর তাদের বিশ্বে আত্মপ্রকাশের একটা বড় সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা এখন অন্ধকারের দিকেই ফিরে যাচ্ছে। এটা বড় হতাশাজনক।
গতকাল শুক্রবার ঢাকার একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ইয়াংহি লি এসব কথা বলেন। সাত দিনের সফরে বাংলাদেশে এসে গত বৃহস্পতিবার তিনি নোয়াখালীর ভাসানচরে যান, যেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
মিয়ানমারের ভেতরে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে জাতিসংঘের এই দূত বলেন, এখনো যে কজন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে অবশিষ্ট রয়েছে তাদের জন্য খুব ভয়ের একটি পরিবেশ তৈরি করে ধীরে ধীরে সেখান থেকে তাদের বাংলাদেশে বিতাড়নের পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
‘জিরো লাইনে এখনো যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা রয়েছ সেখানে তাদের নিয়মিত ফাঁকা গুলি ছুড়ি ভয় দেখানো, রেডিওতে তাদের নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে যাতে তারা বাংলাদেশে ঢুকে যায়।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘ দূত বলেন, তাদের ফরিয়ে নিয়ে যেতে হলে যে পরিস্থিতি তৈরি করা দরকার মিয়ানমার তা একেবারেই করছে না, বরং এখনো সহিংস পথ বেছে নিচ্ছে।
মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের বিচার দাবি করে জাতিসংঘের দূত বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসানের আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল।
বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা অদূর ভবিষ্যতে মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারবে এমন বলা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন ইয়াংহি লি। এ সময় তিনি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ‘তাড়াহুড়া’ না করারও পরামর্শ দেন।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে গত ১৯ জানুয়ারি এক সপ্তাহের বাংলাদেশ সফরে আসেন মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। তার আগে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যার নিয়ে মিয়ানমারের প্রতিবেশী দুই দেশ থাইল্যান্ডও সফর করেন।
জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত চলতি সফর থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও পরামর্শ আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪০তম অধিবেশনে উপস্থাপন করবেন।
মিয়ারনমারের সরকারি বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে প্রায় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আর এর আগে থেকে আরো প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা এখানে বসবাস করছে।