‘লিভিং ঈগল’ গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও পাবনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল আজম মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সাইফুল আজম, যিনি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, জর্ডান ও ইরাকের বিমানবাহিনীর বৈমানিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বৈমানিক হিসেবে অসামান্য অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনী তাঁকে বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’ এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। লড়াকু এই আকাশ যোদ্ধা আজ রোববার দুপুর দেড়টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
যুদ্ধক্ষেত্রে অনন্য সব অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে সাইফুল আজমকে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনী বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’ এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ।
১৯৪১ সালে পাবনা জেলার খগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাইফুল আজম। উচ্চমাধ্যমিক স্তর পাশ করে ১৯৫৬ সালে উচ্চতর শিক্ষার্থে পশ্চিম পাকিস্তানে যান। ১৯৬০ সালে জিডি পাইলট ব্রাঞ্চের একজন পাইলট হন তিনি।
১৯৬৫ সালে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাইফুল আজম পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের হয়ে যোগ দেন। এই যুদ্ধে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ সাইফুল আজমকে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা ‘সিতারা-ই-জুরাত’ এ ভূষিত করা হয়।
১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে জর্ডানের বিমানবাহিনী ‘রয়্যাল জর্ডানিয়ান এয়ার ফোর্স’-এ পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে যান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম। সেখানে তিনি জর্ডানের বিমানবাহিনীতে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
একক ব্যক্তি হিসেবে আকাশপথের যুদ্ধের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করার রেকর্ডটিও তাঁর। এই কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ জর্ডান থেকে সাইফুল আজমকে ‘হুসাম-ই-ইস্তিকলাল’ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
পাকিস্তানে ফেরার পর ১৯৬৯ সালে ‘শেনিয়াং এফ-৬’ জঙ্গি বিমানের ফ্লাইট কমান্ডার হন সাইফুল আজম । এরপর পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ‘ফাইটার লিডারস স্কুল’ এর ফ্লাইট কমান্ডারের দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯৭১ সালে সাইফুল আজম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের শুরুতেই তাঁর ওপর পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে সাময়িকভাবে উড্ডয়নে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে আসেন সাইফুল আজম। ১৯৭৭ সালে তিনি উইং কমান্ডার পদে উন্নীত হন। তাকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঢাকা ঘাঁটির অধিনায়ক করা হয়। বিমানবাহিনীতে ডিরেক্টর অব ফ্লাইট সেফটি ও ডিরেক্টর অব অপারেশনসের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। অবশেষে ১৯৭৯ সালে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন তিনি। অবসরের পর সাইফুল আজম ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দুবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
সাইফুল আজমের জানাজা আজ সোমবার বাদ জোহর বিমান বাহিনীর হ্যাঙ্গারে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে বিমান বাহিনীর কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।