জুবায়ের, জবি প্রতিনিধি : করোনা পরিস্থিতিতে মেস ভাড়া নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পাশ্ববর্তী থানায় অভিযোগ জানিয়ে বাড়তি হয়রানির মুখে পড়ছেন তারা।
এদিকে প্রতিদিন মেস মালিকরা ফোনকলে ভাড়ার জন্য তাগদা দিয়ে যাচ্ছেন। ভাড়া কিছুটা মওকুফ কিংবা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বাসা থেকে মালামাল বাহিরে ফেলে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এনিয়ে মালিকদের সাথে দ্বন্ধে গেলে পরবর্তীতে মেস ভাড়া পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। তাই বাড়ি ভাড়া নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আয়শা আফরিন লক্ষ্মীবাজার এলাকায় মেস ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত মার্চ মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দেয়ার পর গ্রামের বাড়ি চলে আসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য ফোন দেয়। এনিয়ে দুই মাসের ভাড়াও পরিশোধ করেছি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে গত এক মাসের ভাড়া দিতে সমস্যায় পড়ি। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে ফোন দিলে উনি থানায় যোগাযোগ করতে বলেন।
অনেক কষ্টে থানায় যোগাযোগ করলে, ওনারা আমাকেই বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে মিউচুয়াল করতে বলেন। এরপর পুনরায় প্রক্টরকে ফোন দিলে উনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোনো বড় ভাইকে বলে সমাধান করতে। এই শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী আমি প্রক্টর স্যার ও থানায় ফোন দিয়েছি। কোনো সহযোগিতা পাচ্ছিই না, উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রিপন হোসেন গেন্ডারিয়া এলাকায় মেস ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, বাসা ভাড়া সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। সেখান থেকে পুলিশের এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়। অনেক কষ্টে ওই কর্মকর্তার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে শুনি উনি করোনায় আক্রান্ত। তিনি বলেন, এই সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের হল সুবিধা নেই, সে হিসেবে আমাদের সংকটকালীন সম্পূরক অর্থ সহায়তা দিতে পারে।
রাজধানীর সূত্রাপুর থানার এস.আই সুব্রত কুমার জানান, আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গুলো পাচ্ছি। অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়া দিয়েই তার পরিবার চালায়। তাদেরও অনেক সমস্যা রয়েছে। দুপক্ষই পরিস্থিতির শিকার। আমরা অনেকগুলো সমস্যা দেখেছি। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে জানিয়েছি। এই সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে। আমরা এটা নিয়েই বেশি জোর দিচ্ছি। যে শিক্ষার্থী এখন টিউশনির কথা বলে বাসা ভাড়া দিতে পারছে না, সে ক্যাম্পাস খুললেও বাসা ভাড়া দিতে পারবে না। কারণ, ক্যাম্পাস খুললেই টিউশনি পাবে না সবাই। আর আমরা ইতোমধ্যে বলেছি ক্যাম্পাস খুললে বাসা ভাড়া সমস্যা নিয়ে কথা বলবো।
বাসা ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক হয়রানির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এব্যাপারে আমি কিছু জানি না। বাসা ভাড়া সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের সম্পূরক অর্থ সহায়তা দেয়া যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, এতো শিক্ষার্থীকে টাকা দেয়া সম্ভব না। ক্যাম্পাস খুললে দুয়েকটা কেইস আমরা বিবেচনা করে দেখতে পারি।