প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে রাজধানীসহ সারাদেশকে তিনটি জোন- রেড, ইয়েলো ও গ্রিন ভাগে ভাগ করে কর্মপন্থা গ্রহণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। শনিবার (৬ জুন) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। রোববারই (৭ জুন) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বেশি করোনা আক্রান্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে তা লকডাউন করে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
এদিকে, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, সংক্রমণের মাত্রা বাড়লেও আর সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্তে ফিরছে না সরকার। জোন ভাগ করে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হবে। রবিবার থেকেই রাজধানীতে জোন ভাগের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোনভিত্তিক লকডাউনে দেরির চড়া মাশুল গুণতে হবে। দেশে গত দু’সপ্তাহে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
এ পরিস্থিতিতে শনিবারও দফায় দফায় বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর। বৈঠক শেষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানান, আর পুরো দেশে ছুটি ঘোষণার চিন্তা নেই সরকারের। ঝুঁকি বিবেচনায় রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার দিকেই এগুচ্ছেন তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিয়ে রোববার থেকেই ঢাকায় জোন ভাগের কাজ শুরু হবে।
অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকার একাধিক জায়গায় কালকেই (রোববার) ভাগ করার একটি প্রচেষ্টা হাতে নেয়া হয়েছে। রেড জোনগুলোতে সব কিছুই বন্ধ করা হবে।
জানা গেছে, করোনা মোকাবিলায় বুধ বা বৃহস্পতিবার থেকে জোনিং ব্যবস্থা পুরোদমে বাস্তবায়ন করবে সরকার। এজন্য একটি অ্যাপও তৈরি করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্রম অবনতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর গত ১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা সভায় বসেন। ওই সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার কথা জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে- বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা মুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়েলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি এক লাখে যদি ৩০ জন বা এর বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত থাকে তবে সেটাকে রেড জোন বলা হবে। ৩ জনের বেশি কিন্তু ৩০ জনের কম থাকলে তবে সেই এলাকাকে ইয়েলো জোন বলা হবে। এক বা দু’জন বা কেউ না থাকলে সেটাকে গ্রিন জোন বলা হবে।
তবে জোন ঘোষণার ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। রেড জোন ঘোষণার ক্ষেত্রে এক লাখে আক্রান্তের সংখ্যা ২০, ৩০ ও ৪০- তিন ধরনেরই মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানা গেছে, অ্যাপের মাধ্যমে চিহ্নিত করা থাকবে কোন এলাকা রেড জোন, কোন এলাকা ইয়েলো জোন এবং কোনটি গ্রিন জোন। আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে গেলে, রোড জোন পর্যায়ক্রমে ইয়েলো ও গ্রিন হবে। প্রযুক্তিগত সহায়তার কাজটি করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও এটুআই। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) তথ্য সরবরাহ করবে।