আগামী ১০ জুন শুরু হতে যাচ্ছে একাদশ সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশন। ১১ জুন বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট পেশ করবেন। আগামী অর্থবছরের (২০২০-২১) এ বাজেট অধিবেশনকালে কক্ষে উপস্থিত থাকবেন সর্বোচ্চ ১০০ এমপি। করোনাকালের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে অধিবেশন কক্ষে একদিনে সর্বোচ্চ ১০০ জনকে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি সংসদের হুইপদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে সংসদের কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত হলেও বাজেট ৩০ জুনেই পাস হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার হুইপ ইকবালুর রহিম জানান, এক দিনে ৯০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ জন এমপি অধিবেশনে যোগ দেবেন। কে, কোন দিন অংশ নেবেন সেটা হুইপদের পক্ষ থেকে আগেই তাদের মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেওয়া হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এবারের অধিবেশনকে ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসএসএফের চাহিদা অনুযায়ী অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে টেস্ট করানো হচ্ছে। তবে এমপিদের করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক নয়, এটা ঐচ্ছিক। তারা চাইলে সংসদের মেডিকেল সেন্টারে টেস্ট করতে পারেন।
সংসদ-সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে তিনজন এমপি করোনায় আক্রান্ত হলেও তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে জামালপুরের এমপি ফরিদুল হক খানের কোনো উপসর্গ না থাকলেও ৪ জুন তিনি করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বাজেট অধিবেশনে অংশ নেবেন এমন ৯৩ কর্মকর্তার পরীক্ষা এরই মধ্যে সংসদের মেডিকেল সেন্টারে সম্পন্ন হয়েছে। অধিবেশন কক্ষে ঢুকবেন এমন সবাইকে এই টেস্ট করানো হবে বলে জানা গেছে। শুধু নেগেটিভ হলেই হবে না- এই কর্মকর্তাদের বাজেট অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করতে সংসদ সচিবালয়কে পরামর্শ দিয়েছে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিশেষ বাহিনী এসএসএফ।
সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস ক্যাপ্টেন নাঈম রহমান জানান, এসএসএফ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কিছু নিরাপত্তা নির্দেশনা পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। সংসদ ভবনের মেডিকেল সেন্টারের প্রধান আরিফুল হক জানিয়েছেন, দুই দিনে ৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে চারজনকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
সংসদ-সংশ্লিষ্টরা জানান, বয়স্ক ও অসুস্থ এমপিদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। অধিবেশন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সারিতে যেসব এমপির আসন রয়েছে তারা কেউই সেখানে বসতে পারবেন না। তাদের অন্য আসনে বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজেট অধিবেশনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংসদের নির্ধারিত এলাকায় সব ধরনের আসা-যাওয়া সীমিত করে ফেলা হয়েছে। একটি গেট খোলা রেখে সবক’টি প্রবেশদ্বার এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংসদ এলাকায় এতদিন দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তার জন্য নতুন সদস্য মোতায়েন করা হবে। আগে থেকে নিয়োজিতদের মধ্যে অন্তত দেড়শ’ পুলিশ সদস্য করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তাই এতদিন যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের সবাইকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কার্যালয় সম্পৃক্ত এবং অত্যাবশকীয় কর্মকর্তাদের টেস্ট করানো শুরু হয়েছে। কর্মকর্তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয় এসএসএফ এবং সংসদের নিরাপত্তা বিভাগ (সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস) দেখবেন। সব ধরনের দর্শনার্থী এবং কোনো এমপির পিএস বা এপিএসকেও সংসদে ঢুকতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ৯০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ জন এমপি গড়ে এক দিনে অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে, সংসদের আসন্ন এই অধিবেশন বসবে দিনের প্রথম ভাগে। কোনো বিরতি দেওয়া হবে না। সংসদের প্রবেশমুখে উপসর্গ পরীক্ষারও ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের আরেক হুইপ আতিউর রহমান আতিক।