প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের কারনে অর্থনীতি যে গতিশীলতা পেয়েছিল তা স্থবির হয়ে গেছে। এটা শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বেই হয়েছে।
দীর্ঘদিন ছুটির পর ধীরে ধীরে সবকিছু সচল করার বিষয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্যই বাংলাদেশে শর্ত শিথিল করা হয়েছে। যারা দিন আনে দিন খায়, মধ্যবিত্ত, সকলের জীবনযাত্রা যেন সচল রাখতে পারে সেজন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ভার্চুয়াল উপায়ে। বৈঠকে সাধারণ ছুটির মধ্যে বিশেষভাবে অনুমোদন পাওয়া চার প্রকল্পসহ মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।
শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় একনেক বৈঠক। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। একনেকের বাকি সদস্যরা এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে সভায় অংশ নেন।
সভা শেষে এনইসিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত না হলেও গুরুত্ব বিবেচনায় বিশেষভাবে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে দুইটি প্রকল্প ছিল করোনা মোকাবিলা সংক্রান্ত। বাকি দুইটি প্রকল্প ছিল প্রাথমিক উপবৃত্তি ও মসজিদভিত্তিক শিশু শিক্ষা সংক্রান্ত। চারটি প্রকল্পই একনেকে উপস্থাপন করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলো। প্রকল্পগুলোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসেনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, একনেকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। কেননা তিনি করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের অনেক সরকারপ্রধানের চেয়ে ভালো করেছেন। ফোর্বস ম্যাগজিনে নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলাতেও তিনি সফল হয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিশেষভাবে অনুমোদিত চার প্রকল্প
সাধারণ ছুটির মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় যে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই অনুমোদন পেয়েছে একনেক বৈঠকে। এর মধ্যে রয়েছে ১১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্প। এতে বিশ্বব্যাংক ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। এছাড়া ১৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এছাড়া ৬৮৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প-তৃতীয় পর্যায় এর দ্বিতীয় সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং ৩১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (সপ্তম পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তির প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুশাসন দেওয়া হয়েছে। এটি প্রকল্প আকারে ব্যয় না করে বাজেট থেকে ব্যয় করা হবে।
একনেক বৈঠকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্প হলো, ১৫৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) ১ম সংশোধিত প্রকল্প, ১২৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) ১ম সংশোধিত প্রকল্প, ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফসল উত্পাদন ব্যবস্থাকে আরো লাভজনক করা প্রকল্প, ৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মানসম্মত মসলা বীজ উত্পাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণ প্রকল্প, ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮ এবং ৬-৮-এর (এক্সটেনশন) নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৩৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প, ১ম সংশোধিত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ঘাটতি থাকলে ভয়ংকর পরিণতি হয়। এজন্য বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দিয়েছে তা অতীতে কখনো দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড়ো সাফল্য হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। কারণ এদেশে এখন প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। জিডিপির হিসাবে কম মনে হলেও স্বাস্থ্য খাতে সরকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।