চিরচেনা গ্রাম আজ অচেনা। দীর্ঘদিনের পরিচিত মানুষ, পাড়া-পড়শি, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের কাছে হঠাৎ অপরিচিত। সব বন্ধন ছিন্ন করে এক আতঙ্কিত মানুষের তকমা শরীরে লেগেছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে ঈদে ঢাকাফেরতদের আতঙ্ক মনে করছেন গ্রামবাসী। তারা বলছেন, করোনা আক্রান্তদের বড়ো একটি অংশ ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের বাসিন্দা। সেখান থেকে কারো গ্রামে আসা মানেই আতঙ্ক। কেননা এখনো পর্যন্ত বেশির ভাগ গ্রাম করোনা মুক্ত। তাছাড়া ঢাকা থেকে কেউ ঈদ করতে গ্রামে আসলেও হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। এতে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
রাজধানী ঢাকা এবং তার আশপাশ এলাকায় যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে, তখন ঐসব এলাকায় কর্মরত লোকজন করোনার ভয়ে পালিয়ে মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, ট্রাক, মিনিট্রাক বা হেঁটেও আসছে গ্রামে। আর এতে আতঙ্কে গ্রামবাসী। এমন চিত্র এখন দেশের প্রতিটি এলাকায়। ঢাকাফেরতরা অযাচিত ঘোরাঘুরি করার জন্য মারধরের শিকারও হচ্ছে। সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ঢাকাফেরত এক দম্পতি গ্রামে ফেরেন। গ্রামবাসীর হোম কোয়ারেন্টাইনের অনুরোধ উপেক্ষা করে তারা বাইরে বের হন। এমতাবস্থায় গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে ঐ দম্পতিকে মারধর করেন। সম্প্রতি ঢাকা থেকে আসা চার ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউপির অন্দি ও সাইপাড়া গ্রামের বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন আড়বাব ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।
ঢাকাফেরতদের আতঙ্কিত মনে করার কারণ হিসেবে গ্রামবাসী বলছেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অফিস, মিল-কারখানায় চাকরিতে কর্মরতদের অনেকেই এ সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। তাদের কেউ কেউ জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত। তাদের কারণে বিভিন্ন উপজেলা করোনা সংক্রমণের তালিকাভুক্ত হয়েছে। ঢাকাফেরতরা গ্রামে ফিরেই দেদারসে চলাফেরা করছেন। বিশেষ করে গ্রামের চায়ের দোকানগুলো খোলা থাকায় আসর জমে উঠে রীতিমতো।
করোনা ভাইরাসে জেলাভিত্তিক আক্রান্তের তালিকায় টাঙ্গাইল প্রথম দিকে। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা প্রায় সবাই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে সংক্রমিত হয়ে এসেছেন। ফলে এই তিন জেলাফেরতরা বর্তমানে টাঙ্গাইলবাসীর কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই পরিস্থিতি দেশের বিভিন্ন জেলার। অনেক জেলায় ঢাকাফেরত কারোর সন্ধান পাওয়া গেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনকে খবর দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন এসে বাড়ি লকডাউন করে দিচ্ছে।
গত রবিবার সকালে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার কলারোয়ার চিড়াঘাটে ফেরেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের স্কুল শিক্ষিকা মোহসীনা হোসেন। বাড়িতে আসার পর কেউই তাকে সহজে গ্রহণ করতে পারেননি। সবার শঙ্কা মোহসীনা করোনা আক্রান্ত হতে পারেন। তিনি টেলিফোনে ইত্তেফাককে বলেন, বন্দিজীবন থেকে কিছুটা স্বস্তির আশায় গ্রামে এসেছিলাম। গ্রামবাসীর আপত্তির মুখে বর্তমানে গ্রামেও গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি। এখন টানা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা লাগবে।
একই অবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ব্যবসায়ী সৈয়দ সাইফুজ্জামানের। ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার কলারোয়ার গ্রামের বাড়িতে সস্ত্রীক ফেরেন তিনি। গ্রামে আসার পর ভিন্ন চিত্র দেখতে পান সাইফুজ্জামান। পরিচিত মানুষগুলো কথাও বলছে না। দূর থেকে পরামর্শ দিচ্ছেন বাসার ভিতরে অবস্থানের জন্য। এ বিষয়ে সাইফুজ্জামান জানান, ঢাকায় টানা ১৪ দিন স্বামী-স্ত্রী হোম কোয়ারেন্টাইন করার পর গ্রামে এসেছেন ঈদ করার জন্য। কিন্তু গ্রামবাসীর অস্বাভাবিক আচরণে নিজেই বিব্রত। বাধ্য হয়ে বাসার ভিতরেই অবস্থান করছেন।আর টি ভি