দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ‘বিধ্বংসী’ শক্তি সঞ্চয় করে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাচ্ছে ২৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, এটি পশ্চিমবঙ্গের দীঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মাঝামাঝি কোনো স্থান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যা নাগাদ।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে কোনো ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের ওপরে ওঠে গেলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়। আর প্রাক বর্ষা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া এ শতাব্দির প্রথম সুপার সাইক্লোনের জায়গা দখল করে নিল আম্পান।
অন্যদিকে, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ২৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে দিঘা থেকে ৯৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে ও পারাদ্বীপ থেকে ৭৯০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ১০৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে।
ভারতের বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা স্কাইমেটের প্রধান মহেশ পালাওয়াট বলেন, এই শতাব্দীতে প্রাক-মনসুন পর্বে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এটাই কিন্তু প্রথম সুপার সাইক্লোন। এর আগে ২০০৭ সালের জুনে আরব সাগরে সুপার সাইক্লোন গোনু তৈরি হয়েছিল। যেটা পরে ওমানের দিকে সরে যায়।
তিনি বলেন, আম্ফান এর মধ্যেই ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগসম্পন্ন ঝড়ো বাতাস সঙ্গে ‘প্যাক’ করে নিয়েছে। মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এটা একটা ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, সেটাও একটা রেকর্ড।
ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী সুনিতা দেবী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৯ মে) সারাদিন ও রাতে সুপার সাইক্লোনের (সর্বোচ্চ গতিবেগ ২৫৫ থেকে ২৬৫ কিমি) তীব্রতা থাকবে। তবে শেষরাতের দিকে উপকূলে আছড়ে পড়লে এটির তীব্রতা কিছুটা কমে অতি প্রবল (সর্বোচ্চ ২১০ থেকে ২৩০ কিমি) ঘূর্ণিঝড় হিসেবে তাণ্ডব চালাবে। এরপর আরও শক্তি ক্ষয় করে উপকূল অতিক্রম করে সমতলে ওঠে আসার সময় বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যার দিকে এটির গতি নেমে আসবে ১৭০ কিমিতে (খুব প্রবল ঘূর্ণিঝড়)। বৃহস্পতিবার (২১ মে) নাগাদ ঝড়টি শান্ত হয়ে নিন্মচাপে পরিণত হবে।
বর্তমানে ঝড়টির যে অভিমুখ রয়েছে তা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ-কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে সীমান্তের ওপারে আসাম পর্যন্ত নির্দেশ করছে। তবে দেশের অভ্যন্তরে এটি তাণ্ডব না চালালেও বজ্রসহ ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের আশঙ্কা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরও ইতোমধ্যে বিপদ সংকেত দিয়েছে সমুদ্রবন্দরগুলোতে। পায়রা ও মোংলা বন্দর অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি থাকায় বন্দর দুটিতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সোমবার বলেছেন, ইতোমধ্যে উপকূলীয় জেলার ১২ হাজার ৭৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ এবং শরীয়তপুর।
উপকূলীয় জেলাগুলোর জন্য ৩১ হাজার মেট্রিক টন চাল, ৫০ লাখ নগদ টাকা, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ৩১ লাখ টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ২৮ লাখ টাকা এবং শুকনো ও অন্যান্য খাবারের ৪২ হাজার প্যাকেট ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।