আজ জন নেত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ডিজিটাল বাংলানিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে জন নেত্রীকে অভিনন্দন। আজ থেকে ১২ বছর আগে আওয়ামীলিগ সভানেত্রী নির্বাচনি মেনফেস্ট এ যখন ৪র্থ শিল্প বিপ্লব হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিলেন তখন এদেশে অনেকে এটি নিয়ে হাসি ঠাট্রা করেছে। নির্বাচনে জয় লাভের পর দেশে তিনি ৪র্থ শিল্প বিপ্লব তথা তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়নের রোড ম্যাপ তৈরি করে কাজ শুরু করলেন। ততদিনে অবশ্যই বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়েছে অনেকদুর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলিগ ক্ষমতায় আসার আগে এদেশে এক সময় সিমকার্ড সহ একটি মোবাইলের দাম পড়ত এক লক্ষ টাকা তাও আবার এনালগ মোবাইল সেট আর মোবাইলে ইন্টারনেট, সেতো কল্পনাও করা যেতো না। ২০০৭ সালে দেশে ফিরে আসার পর আমার বাসায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নিতে গেলে শুধু সংযোগ ফি চাইলো ৬০,০০০ (ষাট হাজার) টাকা, মাসিক ফি ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা তাও নেট স্পিড মাত্র ২৫৬ kbps (একটি ইমেইল একাউন্ট লগিন করতে ৫ মিঃ সময় লাগতো)। আওয়ামীলিগ সরকার কাজ শুরু করে একে একে ১ম ও ২য় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশ কে যুক্ত করার পর এখন ফি ছাড়াই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নেয়া যায় তাও নেট স্পিড ৩০ Mbps এবং মাসিক ফি ১০০০ হাজার টাকা। যার মানে নেট স্পিড বেড়েছে ১০০ গুন আর মাসিক ফি উল্টো কমছে ৩ গুন। এখন যারা পকেট থেকে স্মার্ট ফোন বের করেই ফেইসবুকে সরকারের নানা কাজের সমালোছনা করছেন সেটিও সম্ভব হতো না যদি না আওয়ামীলিগ সরকার দেশকে তথ্য প্রযুক্তিতে এতদুর এগিয়ে না দিতো। আমরা বেঁচে থাকতে কারো অবদান স্বীকার করি না, মৃত্যুর পর মুল্যায়ন করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনকাল হয়তবা একদিন এদেশের ইতিহাসে উন্নয়নের স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিগত এক যুগে হাটি-হাটি পা-পা করে আমরা এগিয়েছি অনেকদূর। ২০০৮ সালে এদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারি ছিল ১৫ লক্ষ যেটি বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৬ কোটিতে। ২০০৮ সালে আউটসোর্সিং খাতে বাংলাদেশের আয় ছিল ২০০ কোটি টাকা। সরকারের সদিচ্ছা ও ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপ করার কারনে যেটি ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪০০ কোটি টাকায়। ৪০,০০০ দেশি ফ্রিল্যান্সার বর্তমানে এ সেক্টরে কাজ করছে। সরকার কতৃক প্রনিত পরিকল্পনা সটিকভাবে বাস্তবায়ন করলে গার্মেন্টস সেক্টরের পর তথ্য প্রযুক্তি খাত হবে দেশের ২য় বৃহত্তম রেমিটেন্স যোগানদাতা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির ভিশন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ছিল তা আজকের এই করোনা মহামারির সময় আরো একবার প্রমানিত হল। করোনা সংকট পুরোও বিশ্বকে ডিজিটাল কমিউনিকেশনে অন্তত ১০ বছর এগিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশেও এই লকডাউনে এত বেশী মানুষ অনলাইনে সক্রিয় আছে যা এ পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যাবহারকারির মধ্যে সর্বোচ্ছ । দেশে এপ্রিল মাসে ব্যান্ডউইথ ব্যাবহার হয়েছে ৭৫০ Gbps যেটি স্বাভাবিক এর ছেয়ে শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেশী। স্কুল-কলেজের ক্লাস নেওয়া, টেলিমেডিসিন, অনলাইন গ্রাহক সেবা ও অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনা সহ অসংখ্য লেনদেন অনলাইনে উঠে এসেছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে আজ বাংলাদেশেই তৈরী হচ্ছে সাশ্রয়ী মুল্যে করোনা রোগীর জন্য ভেন্টিলেটর। বাংলাদেশ আবিস্কার করেছে UV Sterilize light নামক ভাইরাস মুক্তকরন যন্ত্র । যেটি দিয়ে UV রশ্মির সাহায্যে ৫০ বর্গমিটার আয়তনের যেকোন ঘর বা মসজিদ মাত্র ২০ সেকেন্ডে ভাইরাস মুক্ত করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী গনভবনে বসে প্রতিটি জেলার জেলা প্রসাশক সহ করোনা মুক্তি কমিটির সাথে কনফারেন্স করে সরাসরি দিক নির্দেশনা প্রধান করছেন। দেশ ডিজিটালাইজড না হলে এর কোনটিই সম্ভব হতো না।
শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সরকারি সার্ভিস ইতোমধ্যে ডিজিটালাইজড করা হয়ে গেছে। পরিকল্পনা অনুসারে কাজ হলে ২০২১ সাল নাগাদ এই সেক্টরে বৈদেশিক মূদ্রা আয় হবে (৩ বিলিয়ন ডলার) ২,৫৫,০১৫ কোটি টাকা। দেশের আরো অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান ও হবে এই সেক্টরে । সরকার শুধু পরিকল্পনা করেই বসে নেই, প্রধানমন্ত্রীর ICT উপদেস্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের সঠিক নির্দেশনায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেকদূর এগিয়ে গেছে দেশ। এটি খুব বেশি দূরে নয়, অল্প সময়ের মধ্যে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব সফল হবে আর বাংলাদেশ হবে ICT সেক্টরে বিশ্বর ১ নং গন্তব্যস্তল। আমরা সেই আশা করতেই পারি।
এম হাবিবুর রহমান
চীফ এঢিটর